মোহাম্মদ সেলিম খান। কলকাতা সারাদিন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক নতুন নিয়ম জারি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের আরও প্রায় ৪০০ বিশিষ্ট ব্যক্তির ‘মুক্তিযোদ্ধা’ উপাধি প্রত্যাহার করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে এখন তাঁদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হবে। এর আগে, বাংলাদেশের মুদ্রা থেকেও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ সরকারের এই অধ্যাদেশে “বীর মুক্তিযোদ্ধা” সংজ্ঞার পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, রাজনৈতিক নেতা যেমন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এম মনসুর আলি এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে আর আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। তাদের এখন “মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী” হিসেবে গণ্য করা হবে।
পরিবর্তিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, একজন “বীর মুক্তিযোদ্ধা” হলেন এমন ব্যক্তি যিনি ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন অথবা ভারতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদানের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। যার স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা। যোগ্য হওয়ার জন্য ব্যক্তিদের অবশ্যই যুদ্ধের সময় সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম বয়সের সাধারণ নাগরিক হতে হবে অথবা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য হতে হবে। যারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িত ছিলেন।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা নির্যাতিত নারীরা, সেইসঙ্গে ডাক্তার, নার্স এবং চিকিৎসা কর্মীরা যাঁরা ফিল্ড হাসপাতালে আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা করেছিলেন, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই স্বীকৃতি পাবেন।
গত বছর শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে এটিই প্রথমবার নয় যে ইউনূস-নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। গত সোমবার, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক নতুন নকশার ব্যাঙ্কনোট প্রকাশের ঘোষণা করেছে। সেখানে জাতির পিতার ছবির বদলে প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ঐতিহ্যবাহী ল্যান্ডমার্কের ছবি দেওয়া হয়েছে।
এ পর্যন্ত সকল ব্যাঙ্কনোটে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছিল। যিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক স্পষ্ট জানিয়েছে যে নতুন জারি করা নোটগুলি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত বিদ্যমান নোটগুলির পাশাপাশি বর্তমান মুদ্রাগুলির সাথেও প্রচলিত থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে এটিকে দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলিকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার এবং পূর্ববর্তী সরকারের উত্তরাধিকার থেকে সরে আসার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। আবার অনেকে এটিকে জাতির পিতার উত্তরাধিকারকে ক্ষুণ্ণ করার একটি প্রয়াস বলেও সমালোচনা করছেন।