প্রিয়াঙ্কা মান্না। কলকাতা সারাদিন।
বাড়ি বাড়ি প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসানো আপাতত স্থগিত করতে হলো রাজ্যকে। রাজ্যজুড়ে তীব্র বিক্ষোভের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হলো রাজ্য সরকার। গত কয়েকদিন ধরেই স্মার্ট মিটার নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য। জোর করে বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নতুন মিটারে লাগামছাড়া বিল আসছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। এবার সেই স্মার্ট মিটার নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে আপাতত কোনও বাড়িতে স্মার্ট মিটার লাগানো হবে না।
সোমবার রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের দেওয়া নোটিসে জানানো হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে একাধিক বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো হচ্ছিল, তবে বেশ কিছু অভিযোগ আসায় আপাতত সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হচ্ছে।
স্মার্ট মিটার নিয়ে একাধিক অভিযোগ পৌঁছয় বিদ্যুৎ দফতরে। স্মার্ট মিটারের অস্বাভাবিক বিল নিয়ে সোমবারই বিদ্যুৎ দফতরে বিক্ষোভ দেখান হুগলির রবীন্দ্রনগর কালীতলার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, জোর করে ওই মিটার বসিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়েছে, আর তারপরই লাফিয়ে বেড়েছে বিল।হুগলির ব্যান্ডেলের এক পরিবারও কিছুদিন আগেই একই অভিযোগ তুলেছিল। একমাসে ১২ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল আসায় অভিযোগ তুলেছিল তারাও। পরপর এমন অভিযোগ উঠতে থাকায় গৃহস্থের বাড়িতে স্মার্ট মিটার লাগানো বন্ধ করে দিল বিদ্যুৎ দফতর।
সোমবার ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার, বিদ্যুৎ বিভাগ’ উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তির প্রকাশ করা হয়েছে। ‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ উল্লেখ করে এই ঘোষণায় স্মার্ট মিটার প্রকল্প আপাতত স্থগিত করার কথা বলা রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে “বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ার ইত্যাদির মতো জায়গায় স্মার্ট মিটার সফলভাবে লাগানোর পর ৩/৪ জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে কিছু গার্হস্থ্য বাড়িতে স্মার্ট মিটার লাগানো হয়।
এমতাবস্থায় কিছু অভিযোগ আসায় প্রয়োজন মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য গার্হস্থ্য উপভোক্তাদের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ রাখা হলো।”
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার স্মার্ট মিটার গোটা বাংলা জুড়ে লাগানো হয়েছিল। যার মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশই লাগানো হয় গৃহস্থ বাড়িতে। বাকি ৩৫ শতাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বসানো হয়েছিল। সূত্রের খবর, বারাসাতের চাঁপাডালি মোড়ে এই স্মার্ট মিটার নিয়ে ওঠা অভিযোগ চলে যায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যুৎ দফতরকে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশ দেন বলে জানা যাচ্ছে।
Read more news like this in www.kolkatasaradin.com কী এই স্মার্ট মিটার?

স্মার্ট মিটার হলো এমন একটি আধুনিক বৈদ্যুতিন ডিভাইস, যা একটি সিম কার্ডের মাধ্যমে কাজ করে। এটি বিদ্যুতের ব্যবহার, ভোল্টেজ লেভেল সহ বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড করে এবং সেই ডেটা সরাসরি রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কন্ট্রোল রুমে পাঠায়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কন্ট্রোল রুম থেকে দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মিটার চালু বা বন্ধ করা যায়। প্রচলিত মিটারের মতো মাসের শেষে অথবা তিন মাস অন্তর বিল পরিশোধের বদলে, স্মার্ট মিটারে গ্রাহকদের আগে টাকা রিচার্জ করতে হয়, যা এক প্রকার প্রিপেইড মোবাইল রিচার্জের মতো। রিচার্জ না করালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতাও এই মিটারের রয়েছে।
এই আধুনিক প্রযুক্তি একদিকে যেমন বিদ্যুৎ দপ্তরের জন্য তদারকি সহজ করে, তেমনি গ্রাহকদের জন্য খরচ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি করে। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে অতিরিক্ত টাকা খরচের অভিযোগ আসার পরে গোটা প্রকল্প আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর।