সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“যাঁরা বলছেন ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ হচ্ছে, তাঁরা আসলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল। আমরা সংরক্ষণ দিচ্ছি সাংবিধানিক ও বিচার বিভাগীয় নির্দেশিকা মেনে। আমাদের সময়েই ২০১২ সাল থেকে ওবিসি সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে, যা সিপিএমের সময়ে হয়নি।” এভাবেই আজ মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় ওবিসি তালিকা নিয়ে বিবৃতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার রাজ্যের বিধানসভার বাদল অধিবেশনে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে ওবিসি নিয়ে ‘অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি’ রুখতে বক্তৃতা দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “ওবিসি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট একটি নির্দেশ দেয়। বেশ কিছু ওবিসিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। বাংলার চাকরিপ্রার্থীরা বিপদে পড়েন। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছি। সেই মামলা বিচারাধীন রয়েছে।”
ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে কোনও ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সমীক্ষা হয়েছে। ওবিসি এ বিভাগে ৪৯টি এবং ওবিসি বি বিভাগে ৯১টি শ্রেণি রয়েছে। আরও ৫০টি অন্তর্ভুক্ত হবে। সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে।”
ওবিসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের নির্দেশ, কমিশনের সুপারিশ, সরকারি বিজ্ঞপ্তি – সবই বিধানসভায় জমা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নানা ধর্মীয় মন্তব্য করেছিলেন। এদিন তার জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “ওরা কিছুই জানে না। মানুষকে শুধু বিভ্রান্ত করতে এসব কথা বলে।”
এদিনের বিধানসভা অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২২ মে, ২০২৪-এ একটা নির্দেশ দেয়। তার ফলে বাংলার একটা বিশাল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী অসুবিধায় পড়ে। এখনও ১১৭ টি শ্রেণি ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করে। পরবর্তী সময়ে হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এটা আমরা আইন অনুযায়ী করেছিলাম। কমিশন সমীক্ষার কাজে হাত দেয়। গত ৩ জুন ওবিসি রিজার্ভেশন ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।”
তীব্র প্রতিবাদ শুভেন্দুর
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই শুভেন্দু উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, “মুখ্যমন্ত্রী ভুল তথ্য দিয়েছেন, আমি কিছু বলতে চাই।” কিন্তু অভিযোগ স্পিকার বিমান ব্যানার্জী তাঁকে সেই অনুমতি না দিয়েই প্রথমার্ধের অধিবেশন শেষ করে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিরোধী দলনেতাকে বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল এই দাবি তুলে প্রতিবাদে সরব হয় বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে কক্ষত্যাগ করলেন বিজেপি বিধায়করা। প্রথমে বিধানসভার ভেতরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এরপরই বিধানসভার বাইরে এসেও বিক্ষোভ দেখান শুভেন্দু সহ বিজেপি বিধায়করা। বিরোধী দলনেতা বলেন, “চাকরি চোর মমতা, বালিচোর মমতা,গরু চোর মমতা, হিন্দু ওবিসিদের অধিকার চুরি করা মমতা বক্তব্য রেখেছে আর স্পিকার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অধিবেশন মুলতুবি করে পালিয়েছে। আমরা ছাড়বো না।”
পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “১৮০ টা ওবিসি করেছে। তার মধ্যে ১১৯ টা মুসলমান। এই সরকার মুসলমানের সরকার, মুসলিম লীগের সরকার।মুখ্যমন্ত্রী হাইকোর্টকে মিথ্যা বলেছেন, এই মামলা মুলতবি আছে মুলতুবি আছে আদালতে। সুপ্রিম কোর্টে ১৫ ই জুলাই ডেট আছে। মিথ্যা স্টেটমেন্টের উপরে আমরা একটা কিছু বললে বলে বিচারাধীন।”