শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
নদিয়ার কালীগঞ্জে তৃণমূল জিততে না জিততেই বিতর্ক। ভোটের ফলাফল প্রকাশের আগে বিজয় মিছিল বেরিয়েছিল। অভিযোগ, সেখান থেকেই বোমা বিস্ফোরণে এক বালিকার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন এবং দোষীদের দ্রুত কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তৃণমূলের বিজয় উৎসবের মাঝেই এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ এক বিরোধী সমর্থকের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। তাতেই ওই বালিকার প্রাণ গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তাঁর এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লেখেন, “কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার বড়চাঁদগড়ে একটি বিস্ফোরণে একটি অল্পবয়সী মেয়ের মৃত্যুতে আমি স্তম্ভিত ও গভীরভাবে শোকাহত। আমার প্রার্থনা ও সমবেদনা এই দুঃখের সময়ে পরিবারের সঙ্গে রয়েছে। পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেবে।”
ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করার এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, এই ধরনের ঘটনা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কালীগঞ্জের ভিতরের এলাকায় এই বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। ঘটনার আকস্মিকতায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিজয় উৎসবের মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ। মৃত বালিকার নাম তমন্না খাতুন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর পুলিশ প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এই ঘটনার বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পুলিশ খুব শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে। তবে ফলাফলের পরই এমন ঘটনা প্রমাণ করল, বাংলায় আইনশৃঙ্খলায় ফাঁক থেকেই যাচ্ছে।
এই ঘটনায় শাসক দলের কড়া নিন্দা করেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ কেমন বিজয়োল্লাস যে এভাবে বোমা ছুড়তে হয়। বিজেপি জিতলে চকোলেট বোমা বা কালীপটকা ফাটানো হয়। তাই বলে বোমা!”
এদিকে, তৃণমূলের দাবি, বিজয় মিছিলের পিছন থেকে আদতে বোমা ছুড়েছে বিজেপিই। তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “আমাদের সন্দেহ মিছিল করছিল তৃণমূল, কিন্তু পিছন থেকে বোমা ছুড়েছে বিজেপি। বিজেপির তো বোমার অভাব নেই।”
চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীর মৃত্যুতে রিপোর্ট চাইল নির্বাচন কমিশন। ভবিষ্যতে, নির্বাচনের গণনা এবং বিজয় মিছিলের ক্ষেত্রে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে কমিশন সূত্রের খবর।
তামান্নার মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার মেয়ে হাত ছেড়ে কোথাও যায় না। খেলতেও যায় না। আমার হাতে মাথা দিয়ে ঘুমোয়। আজও আমার হাত ধরে যাচ্ছিল। হঠাৎ আওয়াজ শোনা গেল। মেয়েটা আমার হাত ছেড়ে একদিকে পড়ল, আমিও একদিকে পড়ে গেলাম। উঠে দেখি আমার একদিকটা জ্বলছে। তারপরই দেখি তামান্না পড়ে আছে।”
এই ঘটনায় শাসক দলের দিকেই সরাসরি আঙুল তুলছে ওই ছাত্রীর মা। তিনি বলছেন, “শুধু ওদের ভোট দিইনি বলে এটা করল।” তবে তৃণমূলের দাবি, এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “কেউ অতি উৎসাহী হয়ে এই কাজ করল নাকি কেউ তৃণমূলের ভাল ফলের পর দলকে কালিমালিপ্ত করার জন্য এই কাজ করল সেটা দেখতে হবে।”