সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলছে। রাজ্যের প্রতি ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’ নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব এনেছিল তৃণমূল। সেই অধিবেশনে যোগ দিয়ে বিস্ফোরক বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
আবাস যোজনায় গত ৩ বছর ধরে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে রাজ্যই আবাসের টাকা দেবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে রাজ্যের ১২ লক্ষ মানুষকে আবাস যোজনার প্রথম দফার কিস্তির টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যা বলেছেন, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে এদিন বিধানসভায় আলোচনা চলছিল। সেখানেই বিরোধী দলনেতা বলেন, “আপনারা ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি করার কথা বলছেন, আমি বলছি, আপনারা রেকটিফাই করুন, আমরা আরও ২০ লক্ষ মানুষের বাড়ি তৈরির টাকা কেন্দ্র থেকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব।”
তৃণমূলকে তোপ দেগে শুভেন্দু বলেন, “আপনারা বলেন বাংলা থেকে কেন্দ্র ৪.৬ লক্ষ কোটি টাকা কর বাবদ নিয়ে যায় আর ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে। ৬.৪৮ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্র দিয়েছে।
রাজ্যকে ফাইনান্সিয়াল ইরেগুলারিটিস ঠিক করতে হবে। আপনারা ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দেন নি, আপনারা প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করেছেন। টাকা আটকে দেওয়ায় আপনারা বাধ্য হয়ে ‘জল স্বপ্ন’ নাম পরিবর্তন করে ‘জল জীবন মিশন’ নাম করতে বাধ্য হয়েছেন।”
শুভেন্দু এও বলেন, “আসুন না একসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সব গরিব মানুষের বাড়ি করে দেব!” আবাস যোজনার টাকা যারা খেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা বলেন, “গ্রামসভায় আবাস নিয়ে স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করে সর্বদল বৈঠকে পাস করিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলে আবাস চালুর প্রস্তাব রাখছি।”
বিরোধী দলনেতার মুখে এভাবে ‘আসুন না একসঙ্গে কাজ করি’ বক্তব্যকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, শুধু দুর্নীতির অভিযোগ করে যে ভোটের নিরিখে বিশেষ লাভ হচ্ছে না, তা ভালই বুঝতে পারছে পদ্মশিবির। পরিবর্তে একের পর এক প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য যেভাবে আরও বেশি মানুষের কাছে সরকারি সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে, তাতে সময়ের সঙ্গে তৃণমূলের জন সমর্থনও বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আবাসের প্রকল্পে রাজ্য এককভাবে ১২ লক্ষ বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করায় গ্রামাঞ্চলে তৃণমূলের জনভিত্তি আরও শক্তিশালী হবে। এটা আন্দাজ করেই সম্ভবত, উন্নয়নের প্রশ্নে বিজেপিও যে রাজ্যকে সহযোগিতা করতে চায় সেই বার্তা এদিন দিতে চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
শুভেন্দু এর পর মনে করিয়ে দিতে চান রাজ্যের জন্য বিজেপির অবদান। তাঁর কথায়, “২ লক্ষ ৫ হাজার ৩.৪ কোটি টাকা দিয়েছে এনডিএ সরকার। আবাস যোজনার জন্য যারা টাকা খেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আপনারা ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি করার কথা বলছেন, আমি বলছি আপনারা রেকটিফাই করুন, আমরা আরও ২০ লক্ষ মানুষের বাড়ি তৈরির টাকা কেন্দ্র থেকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব। আসুন না, একসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সব গরিব মানুষের বাড়ি করে দিই।”
শুভেন্দুর চাঁচাছোলা প্রশ্ন, “সমাধান চান নাকি সমস্যা জিইয়ে রাখতে চান? আপনারা ভায়োলেশন করেছেন বলেই টাকা আটকানো হয়েছে” তাঁর দাবি, কোনও রাজনীতি হয়নি। শুভেন্দু বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে আমার জেলায় ১৬ টার মধ্যে ১৫ টাতে বিজেপি লিড পেয়েছে। আপনাদের সাফ করে দিয়েছি। ওসব ৬-০ শোনাবেন না।” তাঁর কথায়, “এই রাজ্যের সরকারকে আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই বলব, কারণ উনিই মুখ্যমন্ত্রী, প্রশাসনিক প্রধান। পশ্চিমবঙ্গে বঞ্চনার গল্প নেই। আবাস যোজনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা তৈরি করার কথা বলছি। মনরেগায় আপনারা বছরে ৫০ দিনের কাজের কথা বলছেন, আমি প্রস্তাব করছি বছরে ২০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা করা হোক।”
তবে, শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তিনি বলেন, “২০২১ সালে হেরে যাবার পরেই, কেন্দ্রের এই আচরণ শুরু হয়েছে। যদি বাংলায় এত খারাপ কিছু হত। তাহলে বাংলা সেরার পুরষ্কার পরপর তিনবার পেত না।”