সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
প্রত্যেক বছর কলকাতার ইসকন রথযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু গত ২৭ জুন, কলকাতার ইসকন রথযাত্রায় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন, যা খানিকটা আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। কারণ, একই সময়ে দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের প্রথম রথযাত্রা এবং তার উদ্বোধনের সরাসরি তদারকি করতে তাঁকে সেখানেই উপস্থিত থাকতে হয়।
তবে সেই ‘ঘাটতি’ পূরণ করতে এবার কলকাতার ব্রিগেডের মাঠে বিশেষ জগন্নাথ দর্শনে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে যাওয়ার কথা মমতার।
দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। এই মন্দিরের নির্মাণ ও উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তদারকি ছিল চোখে পড়ার মতো। রথযাত্রার কয়েকদিন আগেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে ভক্ত সমাগমের সংখ্যা ৩০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়, যা এই নতুন তীর্থক্ষেত্রের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় উপস্থিত থেকে সমগ্র আয়োজনের তদারকি করেন, যা দিঘাকে রাজ্যের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার রাজ্য সরকারের লক্ষ্যেরই প্রতিফলন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির পর থেকেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে দর্শনার্থীর ভিড় বহুগুণ বেড়েছে। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, রথযাত্রার সপ্তাহখানেক আগেই প্রায় ৩০ লক্ষ ভক্ত দিঘা পৌঁছে গিয়েছিলেন, এবং এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় করছেন মন্দির চত্বরে।
কলকাতার ইসকনের রথযাত্রায় উপস্থিত থাকতে না পারলেও সেই অভাব পূরণ করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় তিনি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তিনি ইসকনের জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিশেষ দর্শন সারবেন এবং আরতিতেও অংশগ্রহণ করবেন। এই বিশেষ আরতিকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ইসকনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মুখ্যমন্ত্রীর আগমনের জন্য ইসকনের তরফে আলাদা করে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বুধবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুধু দিঘা নয়, উল্টোরথ ও মহরম ঘিরে রাজ্যের কোথাও যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে সেজন্য প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিধায়ক, মন্ত্রীদের এলাকায় থেকে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী ৫ জুলাই দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির থেকে উল্টো রথযাত্রা শুরু হবে। সেই উপলক্ষে ৪ তারিখ থেকেই দিঘায় পৌঁছে যাবেন রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়, অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।
রথযাত্রার দিন আকাশে পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনও বেসরকারি ড্রোন ওড়ানো যাবে না বলেও জানানো হয়েছে। দিঘায় রথের রাস্তায় আগেভাগেই ব্যারিকেড করে দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষ ব্যারিকেডের বাইরে থাকবেন এবং রথের রশি তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কোনওভাবেই যেন কেউ রাস্তায় নেমে না আসেন, তারও কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফ বার্তা— ‘একই দিনে রথ ও মহরম রয়েছে, তাই সজাগ থাকতেই হবে।’ প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।