সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
কিছুদিন আগেই ডিভিসির অতিমাত্রায় জল ছাড়ার জন্য দক্ষিণবঙ্গের গ্রামগুলিতে বন্যা হয়ে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্যা কবলিত গ্রামবাংলায় তখন ঘুরে দেখে বলেছিলেন, এটা ম্যান মেড বন্যা। আর রাজ্যের যে কজন প্রতিনিধি ছিলেন ডিভিসি-তে তাঁদের তুলে নেন। সে কথা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েও দেন।
ডিভিসি- মুখ্যমন্ত্রী দ্বৈরথ তখন রাজ্য-রাজনীতিতে আলাদা মাত্রা পায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যে বলছেন দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। আজ, বৃবস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে প্রবল ধাক্কা খেলেন এই পোড়খাওয়া কংগ্রেস নেতা।
অধীররঞ্জন চৌধুরী মামলাকারী দীর্ঘদিনের সাংসদ। তাই এইসব বিষয়ে তিনি নিজেও কিছু করতে পারেন। প্রাক্তন বহরমপুরের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীকে আজ এই কথাই শুনতে হল কলকাতা হাইকোর্টে। বাংলার বন্যা নিয়ন্ত্রণে ডিভিসি এবং মুখ্যমন্ত্রীর দড়ি-টানাটানি নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধীর চৌধুরী জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু সেই মামলায় একেবারেই সাড়া দিল না কলকাতা হাইকোর্ট। বরং প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদকে চূড়ান্ত ভর্ৎসনাও করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন যে বানভাসী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার জন্য দায়ী করেছেন ডিভিসি’কে। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলা যে বন্যার সতর্কবার্তা দিয়েছিল, সেই তথ্য়ও সামনে এসেছে। আর সে কথায় কান দেয়নি ডিভিসি। এই দ্বৈরথ নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অধীর চৌধুরী। আজ বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল আদালতে। যেখানে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, ‘অনেক ক্ষমতা আছে আপনার। নিজেই কিছু করুন।’ আর তাতেই চাপে পড়ে যান অধীর।
এই ঘটনা সামনে আসতেই তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা এখন হাসছেন। অধীর চৌধুরীর আইনজীবী প্রতীপ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘একটি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হোক। বন্যার সময় জল নিয়ন্ত্রণের বিষয় ওই কমিটি দেখবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কথাও উল্লেখ করেন অধীরের আইনজীবী। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ডিভিসি জল ছাড়ায় বন্যা হচ্ছে।’ কংগ্রেস নেতার উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মামলাকারী চারবারের সাংসদ। অনেক কিছু করতে পারেন। কিন্তু এই মামলা অন্য কোনও ফোরামে গিয়ে করুন।’ আর তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার কটাক্ষ, ‘অধীর আসলে প্যাথলজিক্যাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী ব্যক্তি। যেটা একজন রাজনীতিক হিসাবে ঠিক নয়। এখন তিনি আইডেনটিটি ক্রাইসিসিসে ভুগছেন। বিশেষ করে হেরে যাওয়া এবং একের পর এক পদ হারানোর জেরে। ওঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার হতাশায় পরিণত হয়েছে। আজ তাঁর বোকার মতো কাজ দেখেছেন প্রধান বিচারপতি।’