দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন কখনও কখনও আইনি পথে গড়ায়। বিবাহবিচ্ছেদ, হেনস্থা কিংবা পারস্পরিক অভিযোগ-আপত্তির মতো সংবেদনশীল ইস্যুগুলিতে প্রমাণের গুরুত্ব অপরিসীম। এমন পরিস্থিতিতে গোপনে রেকর্ড করা ফোন কলও হতে পারে প্রামাণ্য নথি, জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
সম্প্রতি এক মামলায় স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন স্ত্রী যে, তিনি গোপনে তাঁদের কথোপকথন রেকর্ড করেছেন। এই অভিযোগে তিনি প্রথমে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টে যান। সেই আদালত স্ত্রীর পক্ষে রায় দিলেও, সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় খারিজ করে দিয়ে জানায়—দাম্পত্য সম্পর্কের বিরোধে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে এমন রেকর্ডিং বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
কী বলেছে সুপ্রিম কোর্ট?
বিচারপতি বি ভি নাগরত্ব এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, তথ্যপ্রমাণ আইনের ১২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সাধারণভাবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার কথোপকথন প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু, যদি এই দাম্পত্য সম্পর্ক আদালতে বিরোধের রূপ নেয়, তাহলে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে এই রেকর্ডিং প্রমাণ হিসেবে পেশ করা যেতে পারে।
কী ছিল মামলার প্রেক্ষাপট?
স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে হওয়া ব্যক্তিগত কথোপকথন লুকিয়ে রেকর্ড করেছিলেন এবং তা বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। স্ত্রীর অভিযোগ ছিল, এই রেকর্ডিং তাঁর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন। হাই কোর্ট সেই যুক্তিকে মেনে নিলেও, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আইনের দৃষ্টিতে যদি সেই রেকর্ডিং প্রাসঙ্গিক হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই রায়?
এই রায় দাম্পত্য মামলা সংক্রান্ত বিচারপ্রক্রিয়ায় এক নতুন দৃষ্টিকোণ এনে দিল। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার যুগে অনেকেই ব্যক্তিগত আলাপচারিতা রেকর্ড করেন। তা যদি আইনগত সীমার মধ্যে থাকে এবং প্রাসঙ্গিক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা আদালতে গুরুত্ব পেতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় গোপনীয়তার অধিকার এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার প্রশ্নে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। রায়টি এও স্পষ্ট করেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আদালত সিদ্ধান্ত নেবে, এবং রেকর্ডিংকে তখনই প্রামাণ্য হিসেবে গণ্য করা হবে, যখন তা প্রাসঙ্গিক এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে অপরিহার্য।