হুগলি জেলার হিন্দমোটর কারখানা—এক সময় এই নাম ছিল গর্বের। অ্যাম্বাসাডর গাড়ির জন্য বিখ্যাত এই কারখানা শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান ছিল না, বরং ছিল হাজার হাজার পরিবারের রুটিরুজির কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু ২০১৪ সালে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে এলাকা যেন নিস্তব্ধ ও অন্ধকারে ঢেকে যায়। বহু শ্রমিক কাজ হারান, গোটা এলাকা রীতিমতো জঙ্গলে পরিণত হয়।
তবে অবশেষে আবার আলো দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ফের খুলতে চলেছে হিন্দমোটর কারখানা। কারখানার একাংশে আগে থেকেই টিটাগড় ওয়াগন রেল কোচ তৈরির কাজ করছে। এবার আরও ৪০ একর জমি লিজ নিয়েছে রাজ্য সরকারের থেকে টিটাগড় ওয়াগন, যেখানে তারা মেট্রো রেল ও ইএমইউ এসি কোচ তৈরির জন্য কারখানা সম্প্রসারণ করবে।
টিটাগড় রেল সিস্টেম ইতিমধ্যেই বড়সড় অর্ডার পেয়েছে। তারা মেট্রোর পাশাপাশি ইএমইউ এসি কোচ তৈরির কাজ করবে এই নতুন অংশে। ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে বলেই আশা করছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে ওই এলাকায় পুলিশের নজরদারি এবং নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে নির্মাণকাজ নির্বিঘ্নে হয়।
যদিও এই আশার খবরের মাঝেও একাংশ শ্রমিকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। হিন্দুস্তান মোটর শ্রমিক আন্দোলনের নেতা ও বিজেপি সদস্য পঙ্কজ রায় অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকার ও কোম্পানির যৌথ ব্যর্থতায় বহু শ্রমিক এখনও পর্যন্ত পিএফ ও গ্র্যাচুইটির টাকা পাননি। তিনি জানিয়েছেন, এখনও প্রায় আড়াইশ জন শ্রমিক তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত। তাদের দাবি না মেটালে ভবিষ্যতে আন্দোলন হতে পারে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তবু, এই নতুন উদ্যোগ এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। আবারও হিন্দমোটর এলাকায় গর্জে উঠতে পারে মেশিনের শব্দ, ফিরতে পারে কাজ, আলোয় ভরে উঠতে পারে সেই পুরনো কারখানার প্রাঙ্গণ। কর্মসংস্থান বাড়লে লাভ হবে স্থানীয় ব্যবসা ও পরিকাঠামোরও।
এই প্রকল্প সফল হলে শুধু হিন্দমোটর নয়, গোটা হুগলি জেলার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এখন শুধু দেখার, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের এই যুগ্ম প্রয়াস কতটা দ্রুত বাস্তব রূপ নেয় এবং কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।