সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“ছোটবেলায় একটি প্রবাদ শুনেছিলাম— মিথ্যার গতি বেশি, কিন্তু সত্যের সহনশীলতা চিরস্থায়ী।” এমন মন্তব্য করে বিজেপি নেতাদের মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম। এই বক্তব্যের পেছনে রয়েছে সম্প্রতি ওড়িশার ঝারসুগুডা জেলার বেআইনি ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক হওয়া ৪৪৪ জন বাংলা ভাষী পরিযায়ী শ্রমিকের ঘটনা।
কয়েকদিন আগেই বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেন, আটক ৪৪৪ জনের মধ্যে ৩৩৫ জনের পরিচয়পত্র ভুয়ো এবং এরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। সামিরুল ইসলাম এই দাবিকে সরাসরি মিথ্যা বলে আখ্যা দেন এবং প্রশ্ন তোলেন— “ওড়িশা সরকার যখন কলকাতা হাইকোর্টে স্বীকার করেছে যে এই সমস্ত মানুষ ভারতীয় নাগরিক এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা, তখন বিজেপির এই মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য কী?”
ওড়িশা সরকার জানিয়েছে, যাঁরা বেআইনিভাবে আটক ছিলেন, তাঁদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে কারণ তাঁরা ভারতীয় নাগরিক। এই শ্রমিকেরা মূলত জীবিকার তাগিদে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওড়িশায় গিয়েছিলেন। সামিরুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, “এই গরিব পরিযায়ী শ্রমিকদের বেআইনি ভাবে আটক করার দায়িত্ব কে নেবে? কেন তাঁদের দিনের পর দিন বেআইনি ক্যাম্পে আটকে রাখা হল?”
বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যকে তীব্র কটাক্ষ করে তৃনমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল বলেন, “বিজেপির এই ‘মিথ্যার দাস’ কি এই মুক্তি নিয়ে একটি বাক্যও বলবেন? না, বলবেন না। কারণ মিথ্যা ছড়িয়ে দেওয়াই ওনার কাজ।” তিনি আরও বলেন, “এই মানুষগুলো রোহিঙ্গা নয়, এরা আমাদের ভাই-বোন। এরা ঠিক ততটাই ভারতীয়, যতটা আপনি। তাঁদের সম্মান দিন, তাঁদের বদনাম করার চেষ্টা করবেন না।”
তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য, অনুপ্রবেশ যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেটার দায়ভার বিএসএফ-এর। সীমান্ত রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁদের। কিন্তু অনুপ্রবেশের অজুহাতে গরিব মানুষদের হেনস্থা করা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং অমানবিক।
পাশাপাশি বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে মতুয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা লাগাতার হেনস্থার শিকার হচ্ছেন ৷ এমনই অভিযোগ তুলে বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম।

বিজেপিকে ‘বাঙালি-বিরোধী’ দাবি করে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে সামিরুল লেখেন, “মহারাষ্ট্রের বাঙালি-বিরোধী বিজেপি সরকারের দ্বারা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন আমাদের প্রিয় মতুয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা। রাজনৈতিক হিংসা কাউকে রেয়াত করে না৷ বিজেপি নেতারা বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করে বদনাম করার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের হাতে একটি তথ্য উঠে এসেছে৷”