সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে গিয়েও নাম না করে আরজি কর কাণ্ডের প্রসঙ্গ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি কর কাণ্ডকে দুর্ঘটনা এবং দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
‘দুর্ঘটনা অনেক সময়ে ঘটে যায়, কেউ এড়াতে পারেন না। যে কারণেই দুর্ঘটনা।’ নাম না করে তিলোত্তমা কাণ্ড প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও বললেন, ‘বাংলার মাকে অসম্মান করলে মানব না।’
হিন্দুস্তান পার্কে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার বদনাম তো অনেকে করে বেড়ায়। দুর্ঘটনা অনেক সময়ে ঘটে যায়, কেউ এড়াতে পারে না। দুঃখজনক ঘটনা দুঃখজনকই থাকে, সেটা কি মানুষ কখনও ভুলতে পারে? কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাংলার মানুষকে অসম্মান করলে, আমি কখনই মেনে নেব না। আমি যতদিন বাঁচব, আমার হৃদয় যতদিন বেঁচে থাকবে, বাংলার বাইরে, বাংলাকে যারা অসম্মান করছে, তাদের বলব, শুভবুদ্ধির উদয় হোক।”
প্রসঙ্গত, আরজি কর কাণ্ডের ঘটনায় গত দেড় মাস ধরে তপ্ত রয়েছে বাংলা। আরজি কর কাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। স্থ্যভবনের সামনে দীর্ঘদিন ধরে ধরনায় বসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা-সহ হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজগুলোতে থ্রেট কালচারের অবসান সহ একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। যদিও এরই মধ্যে সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজে আবারও চিকিৎসক হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে কেবল চিকিৎসকরাই নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে গোটা ঘটনা ‘দুর্ঘটনা’ বলে নাম না করে আরজি কর প্রসঙ্গেই মত ব্যক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থাৎ এই গোটা ঘটনার নেপথ্যে কোনও ষড়যন্ত্র কিংবা কাউকে আড়াল করার চেষ্টার বিষয় নেই বলেই বলতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্তত তেমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। আর সেটা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ‘বাংলা’ গৌরবকেই হাতিয়ার করলেন।
অন্যদিকে, শুক্রবার, দেবীপক্ষের দ্বিতীয়ার দিনে একডালিয়া এভারগ্রীনের পুজোর উদ্বোধনে এসে স্মৃতিমেদুর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতার এই বিপুল জনপ্রিয় পুজো ঘিরে ব্যক্তিগত আবেগ প্রকাশ করে ফেললেন তিনি। বললেন, “অনেক স্মৃতি ভেসে আসে এখানে এলে।” অন্যান্য বারের মতো এবারও মমতার স্মৃতিপটে ভেসে এল প্রাক্তন তৃণমূল নেতা, বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথা। একডালিয়ার পুজোর সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকত তাঁরই নাম। এ দিন, আরও একবার সুব্রতকে স্মরণ করেই পুজোর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বললেন,”সুব্রতদা নেই ভাবতে পারি না। একসময় কলেজে ছাত্র রাজনীতি করতাম। প্রতিদিন পালা করে সকাল ৯ টায় বাড়ি আসতাম। দুর্গাপুজোর আসার ১ মাস আগে থেকে নবান্নে এসে বসে থাকত, কবে যাবি বল।। আজ সব আছে প্রাণের মানুষটা নেই।” মমতা সুখস্মৃতি টেনে আরও বলেন, “এখানে আসলে অনুরোধ থাকতো স্তোত্র পড়তে হবে। বললে তো অনেকে ভুল ধরে। এক শাস্ত্রের কথা আছে। পঞ্জিকার অনেক মত আছে। চন্ডীপাঠ-এর অনেক মত আছে। ন্যারেটিভ পার্ট আজ তো আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স!”
এর পরেই বাংলা সদ্য ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পাওয়া নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, “আমি খুশি বাংলাকে ক্লাসিকাল ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১০ বছর ধরে ফাইট করেছি। আমি খুশি। আমি গবেষণা করে দিয়েছিলাম। আমাদের গবেষণা পত্রকে অস্বীকার করতে পারেনি।”