ব্রেকিং
  • Home /
  • পশ্চিমবঙ্গ /
  • Sovabazar Rajbarir Durga Puja : শোভাবাজার রাজবাড়ীর দুর্গাপুজোর শুরুর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ব্রিটিশরাও

Sovabazar Rajbarir Durga Puja : শোভাবাজার রাজবাড়ীর দুর্গাপুজোর শুরুর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ব্রিটিশরাও

সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন। বাংলা কথা কলকাতার দুর্গাপুজো ঠিক কবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে রয়েছে বহু বিতর্ক। তবে সেই প্রাচীনকাল থেকে যে সমস্ত দুর্গা পুজো আজও বিদ্যমান তার মধ্যে বনেরই বাড়ীর পুজো হিসেবে প্রথম সারিতে রয়েছে শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। আশ্চর্যজনক....

Sovabazar Rajbarir Durga Puja : শোভাবাজার রাজবাড়ীর দুর্গাপুজোর শুরুর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ব্রিটিশরাও

সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন। বাংলা কথা কলকাতার দুর্গাপুজো ঠিক কবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে রয়েছে বহু....

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
X
Threads
Telegram

আরও পড়ুন

সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।

বাংলা কথা কলকাতার দুর্গাপুজো ঠিক কবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে রয়েছে বহু বিতর্ক। তবে সেই প্রাচীনকাল থেকে যে সমস্ত দুর্গা পুজো আজও বিদ্যমান তার মধ্যে বনেরই বাড়ীর পুজো হিসেবে প্রথম সারিতে রয়েছে শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যিই যে শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপূজা শুরু হওয়ার সঙ্গে রয়েছে ব্রিটিশদের ঐতিহাসিক যোগাযোগ।

উত্তর কলকাতার ৩৩ – ৩৫ রাজা নবকৃষ্ণ দে স্ট্রিটে অবস্থিত এই ৪০০ বছরের প্রাচীন এই শোভাবাজার রাজবাড়ি, যা পূর্বে সুতানুটি নামে পরিচিত ছিল। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই রাজবাড়ি বাংলা তথা ভারতের অনেক ইতিহাসকে লেখা এবং পরিবর্তন, তাছাড়াও বাঙালি হিন্দু সমাজের এক মহাতীর্থ এই শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে বেশ কিছুদিন আগেই ঘুরে এলাম তাই আজ কলম ধরলাম এই রাজবাড়ি নিয়ে একটি ব্লগ লেখার জন্য। এই শোভাবাজার রাজবাড়িই ছিল কলকাতার বুকে প্রথম কোন বাড়ি যারা সর্বপ্রথম কলকাতার সার্ব্বজনীন দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন।

শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। তিনি ৩৫ রাজা নবকৃষ্ণ দেব স্ট্রিটে এই রাজবাড়ির পত্তন করেন। এই এলাকায় দুটো রাজবাড়ি আছে এই বংশের, দ্বিতীয়টি ৩৩ নং নবকৃষ্ণ দেব স্ট্রিটে অবস্থিত যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যদিও সঠিকভাবে কিছুই এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজকৃষ্ণ দেব। যাকে ছোট রাজবাড়ি বলা হয়। আর রাজা নবকৃষ্ণ দেবের প্রতিষ্ঠিত বাড়িটির নাম পরে যায় বাঘ ওলা বাড়ি যদিও সঠিকভাবে এর প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে কিছু বলা যায় না, তবে পলাশীর যুদ্ধের কিছুকাল পূর্বে নবকৃষ্ণ দেবের দ্বারাই এই বাড়ির গোড়াপত্তন ঘটে, প্রথম অবস্থায় দুটো বাড়ি নিয়ে এর পথচলা শুরু হয়।

রাজা নবকৃষ্ণদেবের পিতা রামচরণ দেব নবাব মুর্শিদকুলি খানের আমলে ছিলেন একজন নিমক কালেক্টর, পরিবর্তীতে কটকের দেওয়ান পদে আসীন হোন। পদে আসীন থাকাকালীন বর্গীদের হাতে তিনি মারা যান।পিতার মৃত্যুর পর তার বিধবা মা এর সাথে তিনি কলকাতায় চলে আসেন, এবং শোভাবাজার এলাকায় থাকতে শুরু করেন। তিনি তার মা এর প্রচেষ্টায় ফার্সি, আরবী এবং ইংরেজী ভাষা ভালো ভাবে রপ্ত করে নেন, সেই সময়ে ইংরেজী জানা ব্যক্তি ছিল না বললেই চলে, তাই তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে চাকুরিও পান এবং ক্লাইভের ফার্সি ভাষার শিক্ষক নিযুক্ত হোন, এবং ধীরে ধীরে নিজ যোগ্যতা ও বুদ্ধির বলে তিনি কোম্পানির মুনসির পদ লাভ করেন এবং লর্ড ক্লাইভের খুব কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। শোভাবাজার নামটি এসেছে সেই সময়কাল বড় ব্যাবসায়ি শোভারাম বসাকের নাম থেকে। অনেকের মতে এই শোভারাম বসাকের থেকেই বাড়িটিকে কিনে শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন নবকৃষ্ণ দেব।

সেই সময়ে হিন্দু সমাজপতিরা নানা কারণে সেই সময়কার বাংলার নবাব সিরাজদৌল্লার প্রতি রুষ্ঠ ছিলেন। সিরাজের হাত থেকে মুক্তি পেতে তারা সেই সময় এমন এক শক্তির খোঁজ করছিলেন যারা এই স্বৈরাচারীর হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে। বাংলায় তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান হিসেবে ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ। এরজন্য তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ক্লাইভকেই নির্বাচিত করলেন। তারা ফার্সিতে একটি গোপন চিঠি লিখে তা রবার্ট ক্লাইভের কাছে পাঠালেন। চিঠির ওপরে লেখা ছিল – চিঠিটি যাতে কোনমতেই কোনো মুসলিমকে দিয়ে পড়ানো না হয়। কিন্তু এই চিঠি পড়ার জন্য এমন একজন দোভাষীর প্রয়োজন যিনি ফার্সি এবং ইংরেজি দুটো ভাষাতেই সমানভাবে পটু। সেইজন্য ডাক পড়লো ক্লাইভেরই খুবই ঘনিষ্ঠ নবকৃষ্ণ দেবের। নবকৃষ্ণ ক্লাইভকে চিঠিটি পড়ে শোনালেন। এবং এর প্রত্যুত্তরে আরো একটি চিঠি ফার্সিতে লিখে তিনি পাঠালেন হিন্দু সমাজপতিদের কাছে। শুরু হয়ে গোপনে পরিকল্পনা সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করার। যার পরিণতি হয় ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ। যুদ্ধে সিরাজ নিহত হলেন এবং বাংলা তথা ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ বলা যায় এটিকে।

নবকৃষ্ণের সাথে ক্লাইভের সম্পর্ক ছিল খুবই নিবিড়। সেইজন্য পলাশীর যুদ্ধের জয়লাভের পর পরই এই বিজয় উৎসব পালনের জন্য শোভাবাজার রাজবাড়িতেই খুব ধুমধাম করে আয়োজন করা হয় এক দুর্গাপূজার, যদিও এর প্রধান লক্ষ্য ছিলো ক্লাইভ সহ ইংরেজ অফিসারদের মনোরঞ্জনের ব্যাবস্থা করা এবং কোম্পানী অফিসিয়ালদের মন আরো ভালো ভাবে জয়লাভ করা। এই দুর্গা পূজাই ছিলো কলকাতার বুকে প্রথম সার্বজনীন দুর্গাপূজা। সেই সময়ে বাংলার অনেক বনেদী বাড়িতে দুর্গাপূজার প্রচলন থাকলেও, তা ছিলো একদমই ঘরোয়া, শোভাবাজার রাজবাড়ির এই পূজাই সার্বজনীন দুর্গাপূজার চেহারা লাভ করে। এই পুজোয় সবার জন্য ছিল অবাধ প্রবেশাধিকার। দুর্গাপূজায় জাঁকজমক কাকে বলে কলকাতার লোক প্রথমবারে জন্য তা চাক্ষুষ করেছিলো। তার সাথে ক্লাইভ ও তার অফিসিয়ালদের জন্য ছিলো মনোরঞ্জনে বিশাল ব্যবস্থা। আমোদ প্রমোদ, বাইজি নাচ খাওয়াদাওয়া সবকিছু। দেব পরিবার গোড়া হিন্দু হওয়ায় ইংরেজ সাহেবদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিলো একদমই পৃথক জায়গায়। আর নাচঘরকে এমন জায়গায় তৈরি করা হয়েছিলো, তা ছিলো চন্ডীমণ্ডপের একদমই সামনে, এরফলে ক্লাইভ ও তার সাথীরা পুজোর মূল প্রাঙ্গণে উপস্থিত না থেকেও পুজো দেখলো। হিন্দু শাস্ত্র মতে দুর্গাপূজা এবং তার সাথে সাথে সাহেবদের মনোরঞ্জনের ব্যাবস্থা দুটোই সমান তালে চলতে থাকলো। এই ভাবে দুই এর ভারসাম্য বজায় রেখে নবকৃষ্ণ আরো কয়েক বছর তার পূজা চালিয়ে গেলেন।

নবকৃষ্ণ দেবের এই দুর্গা পূজা দেখে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার যেসব বনেদী বাড়ি ছিলো তারও খুবই উৎসাহিত হয়, এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তারাও শুরু করে দুর্গাপূজার। যদিও এত জাঁকজমক পূর্ণভাবে বা বাইজি নাচের ব্যবস্থা তারা করতে পারেনি। ধীরে ধীরে এই বনেদী বাড়ির পুজো গুলো সামাজিক প্রতিপত্তি ও প্রতিষ্ঠার প্রতীক হয়ে ওঠে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আজকের খবর