সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়া তরুণীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার জেরে এখনো উত্তাল গোটা বাংলা। গত প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে তদন্তে নেমে সিবিআই নিশ্চিত হতে পারেনি চিকিৎসক পড়ুয়া তরুণীকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল নাকি অন্য কোন কারণে হত্যা করে ধর্ষণের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তার মধ্যেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। এবারেও টিউশনি পড়তে গিয়ে ৯ বছরের এক শিশুকন্যা নিহত হওয়ার ঘটনায় তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে রাজ্য প্রশাসন এবং রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মাঠে নেমে পড়ল সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল।
পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে তুলে আছড়ে পড়লো জনরোষ। পরিবারের দাবি পুলিশ প্রথম থেকে যদি বিষয়টিতে গুরুত্ব দিত তাহলে এমনটা হত না। পুলিশের নিস্ক্রিয়তাকে কেন্দ্র করেই শনিবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয় গোটা এলাকা। সকাল থেকেই দফায় দফায় পুলিশ জনতা সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ফাঁড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। লাঠি চার্জও করা হয়। এলাকায় গিয়ে গ্রামবাসীদের তাড়া খেলেন কুলতলির তৃণমূল বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল।
তারই মধ্যে জয়নগরে গিয়ে বচসায় জড়ালেন রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলের দুই নেত্রী। একদিকে অগ্নিমিত্রা পল ও অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিমা মণ্ডল। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিমা মণ্ডলকে দেখে এই প্রশ্নই ছুঁড়ে দেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল। আঙুল উঁচিয়ে তিনি শাসক দলের নেত্রীর কাছে প্রশ্ন করেন। অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘আপনি এখানকার সাংসদ। আপনি অভিভাবক। আপনাকে জবাব দিতেই হবে।’ সংসদকে ঘিরে গো-ব্যাক স্লোগানও উঠতে থাকে ভিড়ের মধ্যে থেকে। পাল্লা সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল বলেন, ‘এটাই ওদের শিক্ষা। আমি কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু ওঁরা শেখাচ্ছে আমার শাড়ি খুলে নেওয়া হোক। আমি ভয় পাই না’। রীতিমত গলা চড়িয়ে জবাব দেন প্রতিমা মণ্ডল।
কী ঘটেছে
টিউশনি পড়তে গিয়ে বাড়ি ফিরল না চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। গভীর রাতে পাওয়া গেল তার মৃত দেহ। কুলতলী থানার কিপাখালীর বাসিন্দা চতুর্থ শ্রেণীর ওই ছাত্রী জয়নগর থানার জয়নগরের মহিষমারিতে শুক্রবার দুপুরে টিউশন পড়তে যায়। আড়াইটার সময় টিউশন পড়তে গিয়ে সন্ধে পেরিয়ে গেলেও না-ফেরায় চিন্তায় পড়ে যান বাড়ির লোক। অভিযোগ, তখন পুলিশের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলেও পুলিশ তা শুনতে চায়নি। এফআইআর করতে চাইলেও পুলিশ নিতে চায়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে। আর তারপর তন্ন তন্ন করে মেয়েকে খোঁজা শুরু হয়। শেষে রাতে জলা জমি থেকে ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। দেখা যায়, ছাত্রীর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। পরিবার ও স্থানীয় মানুষের আশঙ্কা, ধর্ষণ করেই হত্যা করা হয়েছে ছোট্ট মেয়েটিকে। তারপর তার দেহ ফেলে দেওয়া হয়েছে জলা জমিতে । এরপর তদন্ত নেমে শুক্রবার রাতে জয়নগর থানার মহিষমারি এলাকা থেকে মুস্তাকিন সরদার নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে জয়নগর থানার পুলিশ।
ধর্ষণ কীনা নিশ্চিত নয় পুলিশ
খুন করেছে, তবে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেনি অভিযুক্ত। জয়নগরে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে একথাই জানালেন বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি। ধর্ষণ হয়েছে কিনা, তা ময়নাতদন্তের পরই স্পষ্টভাবে জানা যাবে বলে দাবি তাঁর। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সকাল থেকে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। তবে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসপি।
তিনি দাবি করেন, “মহিষমারি পুলিশ ক্যাম্প ৯টা নাগাদ খবর পায়। ওই স্কুলছাত্রী শেষবার কোথায় দেখা গিয়েছিল, কে দেখেছিলেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য জোগাড় করা শুরু হয়। রাতেই মোস্তাকিন সর্দার নামে বছর উনিশের এক যুবককে চিহ্নিত করা হয়। সাড়ে ১২টা নাগাদ মামলা রুজুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তকে। তাকে জেরা করা হয়। খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। তবে ধর্ষণের করা হয়েছে কিনা স্কুলছাত্রীকে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি ধৃত।” আপাতত এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও দাবি এসপি-র।