সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক জগতে নতুন পালক জুড়তে চলেছে কলকাতার মুকুটে। ভারতবর্ষের মধ্যে সবথেকে বড় এবং অত্যাধুনিক মানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য নিউটাউনের বুকে তৈরি হতে চলেছে আন্তর্জাতিক মানের বিশাল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
কয়েক মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঘোষণা করেছিলেন সেই অনুযায়ী এবারে হিডকোর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দরপত্র আহ্বান করা হলো। প্রাথমিকভাবে অন্তত 354 কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে প্রস্তাবিত দরপত্রে জানিয়েছে তারা।
নিউটাউনের বুকে ইতিমধ্যেই প্রায় ২৫ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে। পিপিপি মডেলে হবে এই পার্ক। ইন্টারন্যাশানাল ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল, এতগুলি বিষয়কে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা হচ্ছে। বাংলায় বলা হচ্ছে বিশ্ব অঙ্গন।
প্রস্তাবিত এই পার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন মমতা নিজেই। মমতা বলেন, ‘এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিও বড় ইন্ডাস্ট্রি। সমস্ত এক্সিবিশন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার করা হয়েছে এখানে। কাজেই এটা একটা আন্তর্জাতিক মানের পার্ক হলে এটার নাম দিচ্ছি ইংরেজিতে ইন্টারন্যাশানাল ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল পার্ক। শর্টে বলব IITEC। আইটেক। এখানে আন্তর্জাতিক মানের অনেক কালচারাল ইভেন্ট করতে ওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন নায়ক নায়িকারা আসেন। সারা পৃথিবীর। সারা দেশেরও আসেন। এতে আমাদের প্রচুর প্রোগ্রাম হবে। এটা একটা ট্যুরিজম থেকে শুরু করে এনটারটেইনমেন্ট থেকে শুরু করে ইনফরমেশন থেকে শুরু করে ইনোভেশন থেকে শুরু করে এই জায়গায়…জমিটা আমরা দিয়ে দিচ্ছি। ২৫ একর জমি। এখন টেন্ডার সহ যা যা করার হবে। বাংলায় নামটা হবে বিশ্ব অঙ্গন।
চলতি বছরের ১৪ মে নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, নিউ টাউনেই এ বার আন্তর্জাতিক মানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে উঠতে চলেছে। তার জন্য ২৫ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। মমতা জানিয়েছিলেন, নিউ টাউনে নির্মিত হতে চলা এই সংস্কৃতিকেন্দ্রের পোশাকি নাম ‘ইন্টারন্যশনাল ইনফর্মেশন টেকনোলজি, এন্টারটেনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল পার্ক’ (আইআইটিইসি পার্ক)। বাংলা নাম হবে ‘বিশ্ব অঙ্গন’।
প্রসঙ্গত সাম্প্রতিককালে ব্রায়ান অ্যাডামস, দিলজিৎ দোসাঞ্জ, হানি সিং, সোনু নিগমের মতো তারকারা কলকাতায় বিশ্বমানের কনসার্ট করেছেন। এই অনুষ্ঠানগুলিকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। যা একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলা তথা কলকাতার নাম সাংস্কৃতিক জগতে নতুন করে তুলে আনবে ঠিক তেমনভাবেই বাড়বে কর্পোরেট বাণিজ্যের সুযোগ।
কী হবে নিউ টাউনের প্রস্তাবিত বিশ্ব অঙ্গনে?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট করা যাবে নিউটাউন এর প্রস্তাবিত এই পার্কে। নির্মাণের মূল দায়িত্বে থাকবে হিডকো। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতই এবারে দরপত্র ডাকল হিডকো। পিপিপি মডেলে গড়ে উঠবে ‘বিশ্ব অঙ্গন’।
মমতার কথায়, “বিশ্ব অঙ্গন ভবিষ্যতে গর্বের বিষয় হবে রাজ্যের। হিডকোর সঙ্গে পিপিপি মডেলে নিউটাউনে ২৫ একর জমিতে একটি ইন্টারন্যাশনাল ইনফরমেশন টেকনোলজি, এন্টারটেনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল পার্ক তৈরি করতে চলেছি। কারণ, মনে রাখবেন, যারা ওয়ার্ল্ড ট্যুরে আসেন, তথ্যপ্রযুক্তি, বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন তাঁদের সুবিধা হবে। মনে রাখবেন, কনসার্ট ইকোনমি এখন নতুন ভাবনা। সমস্ত এক্সজিবিশন, এন্টারটেনমেন্টের জন্য বিরাট ব্যবস্থা করা হবে। ২৫ একর জায়গা মানে বিরাট বড় এলাকা।”
মমতা আগেই জানিয়েছিলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কাছে অনেকেই দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতার কাছে ২৫ একর জমি খুঁজে পাওয়া মুখের কথা নয়। বিজিবিএস (বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন)-এর পর থেকেই আমরা জমি খোঁজা শুরু করেছিলাম। অবশেষে নিউ টাউনে ২৫ একর জমি পাওয়া গিয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘আপনারাও প্রোগ্রাম করতে যাবেন কভার করতে যাবেন। শুধু নেগেটিভ খবর দেখলে মানুষ দেখে। এই সব বড় বড় আন্তর্জাতিক মানের প্রোগ্রাম দেখতে মানুষ ভালোবাসে। অনেকেরই এমন একটা ডিমান্ড ছিল। কিন্তু একলপ্তে এতটা জমি কলকাতার কাছে ২৫ একর জমি পাওয়া এত কিছু করার পরে সেটা একটা ম্যাটার। বিজিবিএসের পর থেকেই এটা আমরা খুঁজছিলাম। আজকে আমরা সফল হয়েছি। জমিটা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। টেন্ডারে যাব, বা যা করার হবে। ’