সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
পাহাড়ে শিক্ষক নিয়োগকে ঘিরে ওঠা দুর্নীতির মামলায় এবার বড় স্বস্তি পেলেন ৩১৩ জন শিক্ষক। তাঁদের চাকরি বাতিলের উপর আপাতত ১২ সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখার আদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি বিশ্বরূপ চৌধুরীর বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে এই একই মামলায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সিঙ্গল বেঞ্চ মোট ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছিল। অভিযোগ, তাদের বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল যে, ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া আইন মেনে হয়েছিল না। দার্জিলিং পাহাড়ের জিটিএ এই নিয়োগ করেছিল। এই নিয়েই মূলত বিতর্ক শুরু হয়েছিল।
মামলার শুনানিতে উঠে এসেছিল যে, জিটিএ-র এক বৈঠকে নেতা রোশন গিরি শিক্ষকদের নিয়মিত কাজ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই প্রস্তাবে আপত্তি জানায়। জিটিএ দাবি করে যে, তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত নিয়োগ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আদালত সেই যুক্তি মানেনি। আদালতের মতে, একই সময়ে অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে নিয়োগ হয়েছে, তাই ‘নিয়োগ করা অসম্ভব ছিল’-এই বক্তব্যটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে আরও বলা হয় যে, নিয়মিতকরণের নামে আসলে নতুন নিয়োগ করা হয়েছে, যা আইন লঙ্ঘনের সমান। জিটিএ দাবি করেছিল যে, সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলি বেসরকারি। কিন্তু আদালত জানায়, জিটিএ আইনের ৭৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী ওই স্কুলগুলি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণের অধীনে। ফলে সেখানকার নিয়োগে সরকারি নিয়মগুলি মেনে চলা বাধ্যতামূলক। আদালত চাকরি বাতিল করার পাশাপাশি সিআইডি তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছিল।
আজ, ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ১২ সপ্তাহের জন্য বহাল থাকবে স্থগিতাদেশ। এই শিক্ষকরা দীর্ঘদিন চাকরি করছেন। সিঙ্গেল বেঞ্চ এই বিষয়টি ভেবে দেখেননি। মন্তব্য করে ডিভিশন বেঞ্চ। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবং অন্যান্য কারণে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ছিল। এই বিষয়টিও বিবেচনা করেনি সিঙ্গল বেঞ্চ। কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে আরও জানানো হয়, ৪ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত সকল পক্ষকে।

বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চের আরও নির্দেশ, সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সার্কিট বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মামলার পরবর্তী শুনানির নির্ধারণ করতে হবে। অভিযোগ, জিটিএ-র চুক্তির আগে পাহাড়ে শিক্ষক নিয়োগের কোনও অফিসিয়াল নিয়ম ছিল না। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি অবৈতনিক শিক্ষক নিয়োগ করতেন। শিক্ষা দফতরের অনুমতি মেলার পর সেইসব শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ী করা হত। কিন্তু জিটিএ চুক্তির পরেও তৈরি হয়নি স্কুল সার্ভিস কমিশন।
সেই কারণেই স্বেচ্ছাসেবী অবৈতনিক তাঁদের চাকরি স্থায়ীর জন্যে আন্দোলন শুরু করেন। অবশেষে চাপে পড়ে রাজ্য সরকার শিক্ষাগত যোগ্যতার বিচারে ৪৩৯ জন শিক্ষককে নিয়োগ করে।