সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
মুখ পুড়ল শুভেন্দুর। মুখ পুড়ল বঙ্গ বিজেপির। আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন বারলা।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে একাধিক কাজ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নয়া দিশা পেয়েছেন চা শ্রমিকরা। তবে জনসমর্থনে জিতে মন্ত্রী হওয়ার পরও সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই করতে পারেননি তিনি। কারণ, উন্নয়নের কাজে প্রতি মুহূর্তে বাধা দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
দলবদল করেই একসময়ের নিজের সতীর্থের বিরুদ্ধে বোমা ফাটালেন জন বার্লা।
জন বার্লা এদিন বলেন, “৭ মাস আগে থেকে কথা চলছিল। দিদি ফোন করেছিলেন। আমি চেয়েছিলাম চা বাগান নিয়ে কাজ করতে। মন্ত্রী হয়েছিলাম। কাজ করতে গিয়ে সবসময় বাধা পেয়েছি। রেলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাসপাতাল তৈরি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিরোধী দলনেতা বাধা দিতেন। জনতার আশীর্বাদে জিতেছিলাম তবে শুভেন্দু অধিকারীর বাধায় কোনও কাজ করতে পারেনি।” তাঁর আরও দাবি, “জমি চিহ্নিতকরণের কাজও হয়ে গিয়েছিল। শুধু বাকি ছিল মউ স্বাক্ষর। শুভেন্দু সোজা রেলদপ্তরে ফোন করেন। কাজে বাধা দেন। কাজ করতে দিতেন। কেন এই দল করব যে আমাকে বাধা দেয়। আমার দলই আমাকে অপমান করেছে। উন্নয়নের কাজ করতে দিত না।”
সদ্য দলবদল করা জন বার্লা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান। তিনি জানান, “২০০৭ সাল থেকে চা বাগানের পাট্টার জন্য লড়াই করছেন শ্রমিকরা। কিন্তু পাননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর চা বাগানের জন্য অনেক কিছু করেছেন। জমির পাট্টাও দিয়েছেন।” চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য উন্নয়নের লক্ষ্যে শিবির বদলের ভাবনা বলেই সাফ জানান বার্লা। যদিও জন বার্লার বিস্ফোরক অভিযোগ প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বঙ্গ বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব অবশ্য নতুন কিছুই নয়। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ঘরোয়া কোন্দলের জেরে গেরুয়া শিবির বাংলায় ঐক্যবদ্ধভাবে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না। সে কারণে একের পর এক ভোটে ভরাডুবি গেরুয়া শিবিরের। আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে জন বার্লার দলবদলে উত্তরে গেরুয়া শিবিরের সংগঠন যে কিছুটা মুখ থুবড়ে পড়ল, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
সুব্রত বক্সী বলেন, জন বার্লা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায়, চা বাগানে সংগঠন শিক্তিশালী হবে। দলের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বার্লাকে যেমন রাজ্য কমিটিতে কাজ করাবেন, তেমনই তাঁকে চা বাগানেরও দায়িত্ব দেবেন।
তৃণমূলে যোগ দিয়ে এদিন বার্লা প্রথমেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ধন্যবাদ জানান সমাজের জন্য কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু কেন আচমকা এই সিদ্ধান্ত? কারণ জানালেন বার্লা নিজে। এদিন তিনি বলেন, 'আজ থেকে ছ-সাত মাস আগে থেকেই কথাবার্তা চলছিল। দিদিও মাঝে ফোন করেছিলেন। কাজ করার কথা বলেছিলেন।'
একই সঙ্গে বার্লা এদিন বলেন, তিনি কাজ করতে চেয়েছিলেন চা বাগানের জন্য। কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার পরেও, তিনি যেভাবে কাজ করতে চাইতেন, বাধা মিলত সব জায়গায়। তিনি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। শুভেন্দু অধিকারীকে সরাসরি নিশানায় দাঁড় করিয়ে বলেন, নিজের দলের লোকেরাই তাঁকে হাসপাতালের কাজে বাধা দিয়েছে। বার্লার বক্তব্য, যদি হাসপাতাল তৈরির মতো কাজ আটকে দেওয়া হয়, তাহলে কে ওই দলের সঙ্গে আর কাজ করবে? বার্লা বলেন, 'জনতা আমাকে ভোট দিয়ে পাঠিয়েছিল কাজ করার জন্য। কিন্তু কাজ করতে পারতাম না। কেন করব ওই দল, যেখানে আমি কাজই করতে পারব না?' চা বাগানের শ্রমিকরা ২০১৪ থেকে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও, তাঁরা কী পেয়েছেন? সেই প্রশ্নও তোলেন বার্লা। একই সঙ্গে প্রশংসা করেন, মমতার প্রকল্পের, সিদ্ধান্তের। মমতার সঙ্গে চা বাগানের একাধিক বিষয়ে, চা শ্রমিকদের নিয়ে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।

এদিন বার্লার কথায় বারবার উঠে এল বিজেপির প্রসঙ্গ। বার্লার অভিযোগ, গেরুয়া শিবিরে বারবার কাজ করতে গিয়ে বাঁধার মুখে পড়েছেন তিনি। শুভেন্দুকে চরম কটাক্ষ করে বার্লা এদিন বলেন, তিনি এমন কোনও নেতার সঙ্গে কাজ করতে চান না যে অন্যকে বাধা দেন। বার্লা আরও বলেন, জনতাকে ভাগ করে সে মুখ্যমন্ত্রী হতে চায়, তিনি এরকম নেতার সঙ্গে দেখাও করতে চান না।