সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বেকায়দায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
কলকাতা হাইকোর্ট থেকে পাওয়া রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের আগাম জামিনের বিরোধিতায় মামলা করতে গিয়ে উল্টে সুপ্রিম কোর্টেরই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল সিবিআই৷ ছ’বছর ধরে কেন সিবিআই মামলা করার কথা ভাবল না, কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে সেই প্রশ্নই তুলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই৷ সেই মামলাতেই সর্বোচ্চ আদালতে স্বস্তি পেলেন রাজীব কুমার। রাজীব কুমারের আগাম জামিন খারিজের জন্য সিবিআইয়ের করা আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। মামলায় নোটিস রুজু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর। মাঝে ৬ বছর কেটে গিয়েছে। কোনও ইন্টেরিম অর্ডারও এই ৬ বছরে আসেনি। তাই মামলা ডিসপোস অফ করল সর্বোচ্চ আদালত। তবে মূল মামলার শুনানি তার নিজস্ব মেরিটে করা হবে। ৮ সপ্তাহ পর মামলার শুনানি। রাজীব কুমারের আইনজীবী ছিলেন বিশ্বজিৎ দেব, অভিষেক মনু সিংভি। সিবিআইয়ের হয়ে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
সারদাকাণ্ডে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজীব কুমারের বয়ান রেকর্ড করে সিবিআই। কলকাতায় তাঁর বাসভবনের সামনেও পৌঁছে গিয়েছিলেন সিবিআই অফিসাররা, তা নিয়ে সেই সময় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে শিলংয়ে তাঁকে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপরই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাজীব কুমার। মঞ্জুর করা হয় আগাম জামিন। হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় সিবিআই। ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর নোটিস ইস্যু করে সর্বোচ্চ আদালত। ৬ বছর পর সোমবার ফের সেই মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। এদিন সারদাকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল সিবিআই। বর্তমান ডিজি-র ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার জন্য তাঁকে অকারণ হেনস্থা করা হচ্ছে বলে সওয়াল করেন রাজীব কুমারের আইনজীবী। তিনি সওয়াল করেন, ‘আজ পর্যন্ত সিবিআই তলব করেনি। তদন্তে সহযোগিতা করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন রাজীব কুমার। শর্ত সাপেক্ষে আগাম জামিন মঞ্জুর করা হয়, তা লঙ্ঘন করা হয়নি। শিলংয়ে তাঁকে ৪৮ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন কেন তারা আদালত অবমাননার আবেদন করছে? রাজীব কুমারের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার জন্য।’
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সিবিআই-এর আইনজীবী, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, সিবিআই পশ্চিমবঙ্গে তদন্তের জন্য গিয়েছিল। স্থানীয় পুলিশ, একজন অফিসারকে মারধর করে। কলকাতা পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। সিবিআই অফিসারের বাসভবন ঘেরাও করা হয়। এটি একটি গুরুতর বিষয়। এই মামলার সঙ্গে অবমাননার আবেদনের সম্পর্ক রয়েছে।
এরপর সিবিআই-এর আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই বলেন, আপনি কি গত ৬ বছরে একবারও রাজীব কুমারকে ডেকেছিলেন? পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটি অবাক করার মতো বিষয়, মামলাটি ৬ বছর ধরে বিচারাধীন। গত ৬ বছর ধরে তদন্তের সময় আপনারা তাকে ডাকেননি। ৬ বছরে এটি তালিকাভুক্ত করার জন্য আপনারা কোনও পদক্ষেপ নেননি।
এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গভাই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ আজ জানিয়ে দেয়, রাজীব কুমারের ক্ষেত্রে আগাম জামিনের নির্দেশ বহাল থাকছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া আদালত অবমাননার মামলাটি চলছে। আট সপ্তাহ পর ফের মামলার শুনানি হবে।