শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
‘যারা জল মিশিয়ে ভোটার তালিকায় থাকার চেষ্টা করছেন, তাদের কপালে দুর্ভোগ আছে।’ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে কয়েক বস্তা নথিপত্র জমা দিয়ে এমন বিস্ফোরক হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বিজেপি প্রথম থেকেই দাবি করেছে, বহু ভুয়ো ভোটার তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক। তাই এসআইআরের বিরোধী তাঁরা। এই অভিযোগ কতটা সত্যি তার ‘প্রমাণ’ দিতেই বুধবার তথ্য জমা দিতে সিইও অফিসে এসেছিলেন শুভেন্দু। বিপুল নথি জমা দিয়ে তিনি দাবি করেছেন – ভোটার তালিকায় ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার ডবল এন্ট্রি রয়েছে। সেই তথ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেবই দেওয়া হয়েছে কমিশনে।
শুভেন্দু অধিকারীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার নাম রয়েছে যাদের ডবল বা ট্রিপল এন্ট্রি রয়েছে। কিন্তু অন্য ইস্যুতে কমিশনের ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন তিনি। অভিযোগ, ৫ হাজার ৭০০ বিএলও-র রাজনৈতিক পরিচয়সহ অভিযোগ জমা দেওয়ার পরও কমিশন এখনও পর্যন্ত কোনও রিপোর্ট দেয়নি। বিজেপির তরফে এও দাবি করা হয়েছে, কমিশন জানিয়েছে তারা ৭০ শতাংশ রিপোর্ট পেয়েছে, তবে তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আরও জানান হয়েছে, এ পর্যন্ত ৩০০ জন বিএলও বদলি করা হলেও মূল অভিযোগের সুরাহা হয়নি।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করছেন বিএলওরা। তবে অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে আধিকারিকরা বাড়িতে না গিয়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় থেকে ফর্ম দিচ্ছেন। সেই অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দুও। পাশাপাশি বিজেপির বিএলএ-২দের মারধরের কথা তিনি বলেছেন। শুভেন্দু বলেন, ‘বিজেপির তরফ থেকে কন্ট্রোল রুম বা মনিটরিং রুম খোলা হয়েছে। আমরা ৬৫টি অভিযোগ তুলে ধরেছি কমিশনের কাছে। কোথাও দেখা গিয়েছে, বিএলও বাড়ি বাড়ি না গিয়ে ক্লাবে বসে, কাউন্সিলরের সঙ্গে ফর্ম বিতরণ, ফিল-আপ করছেন। কোথায় দেখা গিয়েছে, বিজেপির বিএলএ-২কে ছাড়াই ফর্ম বিতরণ হচ্ছে। বিজেপির বিএলএ২-দের মারা হয়েছে।’
পাশাপাশি শুভেন্দু জানিয়েছেন, ভারতীয় জনতা পার্টি প্রায় ৫০হাজার বিএলএর কাগজপত্র জমা দিয়েছে। ৪২ হাজার আই কার্ড তারা পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এখনও অবধি ৪৩ হাজার বিএলএদের আই কার্ড পেয়েছে। সিপিআইএম ৩০ হাজার ও কংগ্রেস ৯ হাজার কার্ড পেয়েছে।
বিজেপির অভিযোগ, আইপ্যাকের সঙ্গে যুক্ত কিছু ইআরও ও এইআরও-কে সতর্ক করা প্রয়োজন। দলের দাবি, অনেক জায়গায় বিজেপির বিএলএ-২ কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। এছাড়া দলের বক্তব্য, ‘পুলিশের আচরণ তৃণমূল ক্যাডারের মতো।’
বিজেপি কমিশনের কাছে বিএলও-বিএলএ সংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। তবে আগেই নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ৫২ হাজার বিএলএ পরিচয়পত্র, বিজেপি পেয়েছে ৪৮ হাজার, কংগ্রেস ও সিপিএম মিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার করে।

মৃত ভোটার নিয়ে বিজেপি দাবি করেছে, নন-আধার মৃতের সংখ্যা ১৩ লক্ষ, আধার-সংযুক্ত মৃতের সংখ্যা ৩৩ লক্ষ। এই তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জমা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিজেপির দাবি, যাদের ভাতা বন্ধ হয়েছে (যেমন মৃত ভোটারদের), সেই তথ্য সরকার থেকে কমিশন যেন সরাসরি সংগ্রহ করে।
সিইও অফিসে বসে ভুয়ো ভোটারদের উদ্দেশে শুভেন্দু অধিকারীর সরাসরি হুঁশিয়ারি – যারা জল মিশিয়ে ভোটার তালিকায় থাকার চেষ্টা করছেন, তাদের কপালে দুর্ভোগ আছে।