Tollywood Shilajit : “শুধু আন্দোলন করলে খাব কী! কাজে ফিরছি ….” স্বস্তিকা সোহিনীর উল্টো পথে হেঁটে ঘোষণা শিলাজিৎ এর
রাহুল সিংহ মজুমদার। কলকাতা সারাদিন।
“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।” খালি পেটে যে আন্দোলন হয় না, তা বহু যুগ আগে লিখে গিয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।
কিন্তু সেই কথা বলে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো বোধ হতে ভট্টাচার্যের দল সিপিএম দাবি তুলেছে এবারে দুর্গাপুজো এবং উৎসব বন্ধ রাখার।
সেই একই স্লোগান তুলেছেন টলিউডের বামপন্থী অভিনেতা-অভিনেত্রী বলে পরিচিত স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং সোহিনী সরকার। একদিকে যখন দুর্গাপুজোর সময় তাদের সিনেমা রিলিজ করছে সিনেমা হলে অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটিরোজি বন্ধ করে উৎসব বন্ধ রাখার যেটা তারা দিয়েছেন তাতে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে বাংলা জুড়ে।
এবারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে কাজে ফেরার কথা জানালেন গায়ক অভিনেতার শিলাজিত।
প্রতিবাদ চলুক। পাশাপাশি কাজে ফেরার উদ্যোগ? না কি জারি থাকবে কর্মবিরতি? সম্প্রতি অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিতেই ট্রোলিংয়ের মুখে পড়েন শিলাজিৎ। এই প্রসঙ্গে শিল্পীর কথায়, ‘শুধু আন্দোলন করলে খাব কী? না খেতে পেয়ে মরতে পারব না। আমার সংসার আছে। তা ছাড়া কাজে ফিরছি মানে প্রতিবাদ থেকে সরে আসছি, এমন নয়।’
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিন্দকদের কটাক্ষ শুনে মন ভাল নেই তাঁর। বস্তুত ২ তারিখে তাঁর গানের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, আরজি কর-কাণ্ডে শোকস্তব্ধ রাজ্য। ঘটনার কারণেই অনুষ্ঠান বাতিল করেন শিলাজিৎ। তাঁর কাছে এই পদক্ষেপ প্রতিবাদের থেকেও ঘটনায় মনখারাপের প্রকাশ। সেই বাতিল করা অনুষ্ঠানের পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত হয় ১৪ সেপ্টেম্বর। আর তার পরেই বিপত্তি। একের পর এক তির্যক মন্তব্য ধেয়ে আসে শিল্পীর দিকে।
তাঁর কথায়, ‘এই ট্রোলারদের প্রতি আমার অভিমান নেই। করুণা হয়। রাজ্যের কিছু মানুষ এত অসহিষ্ণু, তাঁরা তলিয়ে ভাবেন না বিষয়গুলি। সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে।’ শিল্পী জানালেন, নিজের কাছে তিনি স্পষ্ট। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানেন, তিনি কেমন মানুষ। বাকি লোকজনকে কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করেন না তিনি। ‘অন্য পেশা নিয়ে মানুষের অসুবিধা নেই। শিল্পীদের নিয়েই যত সমস্যা!’ বললেন সঙ্গীতশিল্পী।
গায়কের মতে, ‘এর আগে কোনও মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছে আমাকে? কখনও যোগ দিইনি। নিজের প্রতি এত অবিচার হয়েছে, তা-ও কিছু বলিনি। কারও সমর্থন চাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না কখনও। তাই প্রচারমাধ্যমে মুখ খুলিনি কখনও। কিন্তু আরজি করের ঘটনা এতই নির্মম, পরিস্থিতি এত সাংঘাতিক, তাই মিছিলে যোগ দিয়েছি।’ যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন শিল্পী। বললেন, ‘তাঁরা নিজেরা কর্মবিরতি রেখে শিল্পীদের কাজে ফেরা নিয়ে মন্তব্য করুন, তা হলে বুঝব! আশা করি, একদিন ওঁরা উপলব্ধি করবেন।’
ছোট ঘেরাটোপে অনুষ্ঠান, কলকাতাতেই। নির্যাতিতাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য গানের পরিকল্পনা রয়েছে? প্রশ্ন শুনে গায়কের জবাব, ‘আলাদা ভাবে গানের কথা ভাবিনি। তবে মঞ্চে কথা ও আলোচনা হবে। শ্রোতারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে চিৎকারও করতে পারেন।’
শ্রেয়া ঘোষাল অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন, কিন্তু শিলাজিৎ অনুষ্ঠানের জন্য উদ্যোগী! বিতর্কের জবাব দিয়ে গায়ক বললেন, ‘শ্রেয়া এখন অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন, সমর্থন পাচ্ছেন। যখন অনুষ্ঠান করবেন, ওঁকে নিয়েও ট্রোল করা হবে।’
শিলাজিৎ জানালেন, কারও সঙ্গে বিবাদ নেই তাঁর। সব কিছু ছেড়ে শুধু আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় কারও পক্ষেই। প্রতিবাদের সঙ্গে কাজেও ফিরতে হবে। ‘ভদ্র শ্রোতারা আসবেন, গান শুনবেন’, আসন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে আশাবাদী গায়ক। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরার চেষ্টা করছেন, তবু কথার নেপথ্যে বিষণ্ণতার আভাস স্পষ্ট। ‘গত ১৬ বছরে একটাও গান লিখিনি। কই তার বেলায় তো কেউ ভাবল না, কী করছে শিলাজিৎ?’ প্রশ্ন গায়কের।