সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
ইস্যু ছিল আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের বিচার। তারপরে দাবি ওঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ। আর সেই দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ব্যানারে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল মঙ্গলবার। তৃনমূল, সিপিএম সহ বাকি সমস্ত রাজনৈতিক দল সমর্থন না করলেও সমর্থন দিয়েছিল বিজেপি। আর এই নবান্ন অভিযান বেআইনি ঘোষণা করে প্রতিরোধের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার।
কিন্তু ছাত্র সমাজের ব্যানারে ডাকা নবান্ন অভিযান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরিবর্তে হয়ে উঠল ব্যাপক হিংসাত্মক। তবে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী নবান্ন অভিযানে গুলি চলার যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তা থেকে নিজেদের সংযত রাখল জীবন রাজ্য পুলিশ।
‘নবান্ন অভিযান’-এর আগেই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী
নবান্ন অভিযান শুরু হওয়ার আগে সকালে পৌনে এগারোটা নাগাদ নবান্নে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্ন অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র
নবান্ন অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি হাওড়ায়। নবান্নমুখী মিছিল ঘিরে হাওড়া ব্রিজে গোড়াতেই তুলকালাম বাধে। সেখানে জলকামান দাগার পাশাপাশি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয় পুলিশকে। হাওড়া ময়দান থেকে নবান্নমুখী মিছিল মল্লিক ফটকে পৌঁছলে, সেখানেও তুলকালাম বাধে। পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইঁটবৃষ্টি হয়। আটকাতে গেলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। সেই সময় আহত হন চণ্ডীতলার আইসি সন্দীপ। ইঁটের আঘাতে মাথা ফেটে যায় তাঁর। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের কয়েকজনও তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
পশ্চিমবঙ্গ ‘ছাত্র সমাজে’র মিছিল ঘিরে তুলকালাম। হাওড়ার মল্লিক ফটক বাজারে এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কার্যত ধুন্ধুমার বেধে যায় পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টি চলে। তাতে আহত হন চণ্ডীতলার আইসি সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়। ইঁটের আঘাতে মাথা ফেটে যায় তাঁর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে।
শুধু ইঁটই নয়, জিটি রোডের ধারে যা পড়ে থাকতে দেখেন আন্দোলনকারীরা, পুলিশকে লক্ষ্য করে তা ছোড়া হয়। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এই নবান্ন অভিযানের ডাক দেয় পশ্চিমবঙ্গ ‘ছাত্র সমাজ’। শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন চলবে বলেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু সকাল থেকেই এই আন্দোলন ঘিরে অশান্তি মাথাচাড়া দেয় বিভিন্ন জায়গায়। সেই আবহেই হাওড়ায় রক্ত ঝরে পুলিশের।
আন্দোলন ঠেকাতে জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড গড়ে তোলা হয়েছিল আগে থেকেই। এদিন সেই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলা হয় একাধিক জায়গায়। ব্যারিকেড টপকে এগোতে থাকে মিছিল। হাওড়ায় জিটি রোডে আজ এক জায়গায় জমা হতে দেখা যায় পুলিশকে। ব্যারিকেড টপকে ছুটে আসা ভিড়কে আটকাতে ছুটে যেতে দেখা যায় পুলিশকে। এর পাল্টা, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁটবৃষ্টি হয়। বাঁশের টুকরো, ইঁটের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা যায় রাস্তায়।
এমনকি রাস্তায় যে গার্ডরেল ছিল, তা-ও জায়গায় জায়গায় উল্টে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতেও দেখা যায় পুলিশকে। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা আটকাতে দাগা হয় জলকামানও। তাতে কিছুক্ষণের জন্য আন্দোলনকারীরা পিছু হটলেও, আবারও ইঁট হাতে চড়াও হন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের মধ্য়ে কয়েক জনকে পুলিশ ভ্য়ানেও তোলা হয়। কিন্তু অশান্তি থামেনি। বরং জিটি রোডে বাধা পেয়ে ফোরশোর রোডে গার্ডরেল, ব্যারিকেড ভাঙতে এগিয়ে আসেন আন্দোলনকারীরা। সেখানেও তুলকালাম বাঁধে।
নবান্ন অভিযানে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল কলকাতা এবং হাওড়ার একাধিক এলাকা। মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়েছেন বিক্ষোভকারী এবং পুলিশকর্মীরা। পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানোয় যেমন বহু বিক্ষোভকারী আহত, অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, সেরকমই এ দিনের ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন পুলিশকর্মী। যাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের আঘাত গুরুতর বলেই পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। তাঁদের কারও মাথা ফেটেছে, আবার কারও দৃষ্টিশক্তিই হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আহত পুলিশকর্মীদের অন্যতম কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট দেবাশিস চক্রবর্তী। এ দিন হেস্টিংসে কর্তব্যরত অবস্থায় বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটে বাঁ চোখে আঘাত পান তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসা হলেও ওই পুলিশকর্মী বাঁ চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। রাতেই এসএসকেএম থেকে তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি চোখের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি গুরুতর আহত অবস্থায় আরও বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতেই তাঁদের দেখতে এসএসকেএম হাসপাতালে যান নগরপাল বিনীত গোয়েল। আহত পুলিশকর্মীদের রয়েছেন আনন্দপুর থানার ওসি সুমনকুমার দে সহ বেশ কয়েকজন। তাঁদের এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। প্রিন্সেপ ঘাট এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এ দিন ওই পুলিশকর্মীরা আহত হন। এ ছাড়াও এসটিএফ-এর এক পুলিশকর্মীর পা ভেঙেছে। তাঁকে অবশ্য রাতেই এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অর্জুন সিং
এ দিন মিছিলে দেখা গেল বিজেপি নেতাদের অনেককেই। অর্জুন সিংহ, তরুণজ্যোতি তিওয়ারিরা বললেন, রাজনীতিক হিসাবে নয়, এ দিনের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন মেয়ের বাবা হিসাবে। মিছিল শুরুর অন্যতম স্থান কলেজ স্কোয়ার থেকে জমায়েতের নেতৃত্ব দেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। এরপরেই প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। অর্জুনের উপস্থিতি প্রমাণ করল এই মিছিল রাজনৈতিক। এমনটাই দাবি কুণাল ঘোষের।