সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
বাংলার স্বাস্থ্য পরিসেবায় নতুন দিগন্ত খুলে গেল। চালু হলো সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম। শুক্রবার অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা-ব্লক হাসপাতালগুলি অনলাইনে যুক্ত হল। ইতিমধ্যেই এম আর বাঙুর হাসপাতালে অনলাইন রেফারেল সিস্টেম চালু হয়ে গেছে, যা এবার অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজেও চালু হল।
কী এই সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম?
এই অনলাইন সিস্টেমে আউটডোরে বসেই চিকিৎসকরা জানতে পারবেন কতগুলি বেড খালি আছে। জেলা ও ব্লক হাসপাতালগুলিও এভাবে তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে নিতে পারবে কোন মেডিক্যাল কলেজে বেড ফাঁকা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার জন্য অনলাইনে পরামর্শক্রমে বাঙুর হাসপাতালে পাঠানো যাবে। রোগীর হাতে থাকবে চিরকূট, যেখানে থাকবে নির্দিষ্ট বেড নম্বর, যা নিয়ে সরাসরি ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ফলে রোগীর পরিবারও জানতে পারবে কোথায় তাদের প্রিয়জনের উপযুক্ত চিকিৎসা হবে, কমবে হাসপাতালের বাইরের অপ্রয়োজনীয় ভিড়।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লালবাজার ইতিমধ্যেই পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজে সিকিউরিটি অডিট করেছে। নার্স ও মহিলা চিকিৎসকদের রাত্রিকালীন ডিউটির জন্য থাকবে মহিলা পুলিশ। আর নিরাপত্তা বাড়াতে থাকবে ‘রাত্তিরের সাথী’ অ্যাপের ব্যবস্থাও।
সরকারি সূত্রে খবর, কিছুদিনের মধ্যেই বাকি ২৩টি মেডিক্যাল কলেজে এ ব্যবস্থা চালু হবে, এবং উত্তরবঙ্গের জন্য চিহ্নিত হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তবে এখনই সবকটি মেডিক্যাল কলেজে ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না। সাধারণত প্রত্যেকটি মেডিক্যাল কলেজের এমার্জেন্সি বিভাগের পাশেই এই ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো থাকবে, যেখানে কোনও হাসপাতালে কত বেড খালি আছে সেটা জানা যাবে। অনেক সময় কেউ যদি ভেঙে দেয় অথবা বোর্ড খুলে নিয়ে যায় তবে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ষষ্ঠদ্বশ অর্থ কমিশনের স্বাস্থ্য খাতে আর্থিক অনুদান পেতে ন্যাশানাল হেল্থ মিশন জেলাশাসকদের পরিকাঠামোগত বাজেট প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। কেন্দ্রের নির্দেশ মেনেই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের কনসালটেশন রুম, বিশ্রাম কক্ষ, শৌচালয়, অপারেশন থিয়েটর, লিফট, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা প্রতিবন্ধী ও প্রবীনদের জন্য উপযুক্ত র্যাম্প ও অন্যান্য সুবিধার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে।
রাজ্য সরকার কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারের পাশাপাশি সেন্ট্রাল রেফারেল ইউনিটের পরিকাঠামো তৈরির জন্য উপযুক্ত প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে জেলা শাসক ও জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এই ধরনের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চব্বিশ ঘন্টা চিকিৎসা পরিষেবা চালু রাখতে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সহায়কদের জন্য কোয়াটার তৈরির বাজেট সহ বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে জানাতে হবে এই ধরনের কোয়াটার কতগুলি তৈরি করতে হবে।
হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বসার উপযুক্ত ব্যবস্থা করার নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে বা হয়েছে। মহকুমা থেকে জেলা হাসাপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। অবশ্যই জেলা ও মহকুমা হাসাপাতালে মা ও শিশুদের চিকিৎসার পরিকাঠামো বিশেষ করে সদ্যজাত শিশুদের জন্য ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট তৈরির কথা বলা হয়েছে।