সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে দাগি অযোগ্য হিসেবে ১৮০৬ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে একাধিক মামলা দায়ের হওয়ার প্রেক্ষিতে আজ সুপ্রিম কোর্ট আরো একবার পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দিল নতুন করে দাগই অযোগ্যদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তবে এসএসসি পরীক্ষা গৃহীত হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন ফল প্রকাশের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে কোন বাধা নেই বলে মামলাকারীদের আপত্তি উড়িয়ে জানিয়ে দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
গত ৩ এপ্রিল এসএসসি-র ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। চাকরি হারান প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী। সেইসময় সুপ্রিম কোর্ট দাগি অযোগ্যদের নাম প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল।
সেই মতো তালিকা প্রকাশ করে এসএসসি। তাতে নাম রয়েছে ১৮০৬ জনের। সেই তালিকা নিয়েই এদিন অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি এন ভি আঞ্জারিয়ার বেঞ্চ। রাজ্যের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কপিল সিবল এদিন আদালতে জানান, দাগি অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তখন দুই বিচারপতি বলেন, দাগি অযোগ্যদের তালিকা অস্পষ্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ওই তালিকায় জটিলতা বাড়ছে। বিস্তারিতভাবে তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে দুই বিচারপতি জানান, দাগি অযোগ্যদের তালিকায় বিষয়ভিত্তিক এবং সংরক্ষণভিত্তিক তথ্য থাকতে হবে। বর্তমান তালিকায় যেটা নেই। এসএসসি জানিয়েছে, তারা আবার তালিকা প্রকাশ করবে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৪ নভেম্বর। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, দাগি অযোগ্যরা যেন নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারেন। এসএসসি জানিয়েছে, দাগি অযোগ্যদের মধ্যে যাঁরা পরীক্ষায় বসার আবেদন করেছিলেন, তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড বাতিল করা হয়।
বুধবার এসএসসি আদালতে জানায়, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ফল প্রকাশ করার চেষ্টা করছে। আদালত তার অনুমতি দিয়েছে। এসএসসি আদালতে জানিয়েছে, তারা আবার তালিকা প্রকাশ করবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৪ নভেম্বর।
গত অগস্টের শেষে দাগি অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করেছিল এসসএসি। তাতে অন্তত ১৮০৬ জন দাগি অযোগ্যের নাম ছিল। তাঁদের মধ্যে যাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের অ্যাডমিট কার্ডও পরে বাতিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দিয়েছিল, এক জন দাগিও যাতে নতুন নিয়োগে অংশ নিতে না পারেন। তা মেনেই এই পদক্ষেপ করেছিল কমিশন। তার পরেই এসএসসি পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, পুজোর পরে ফল প্রকাশ করবে এসএসসি। নভেম্বর মাসে প্রকাশ করা হবে ইন্টারভিউ প্যানেল।
ইতিমধ্যে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির মডেল উত্তরপত্র আপলোড এবং তার চ্যালেঞ্জ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সঠিক উত্তর আপলোড করা হবে। প্রায় ৫০০-র বেশি চাকরিপ্রার্থী উত্তর চ্যালেঞ্জ করেছেন বলে এসএসসি সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫,৬৫,০০০ জন। নবম-দশমের ক্ষেত্রে ৩১,০০০ এর কিছু বেশি ভিন্রাজ্যের বাসিন্দা। একাদশ-দ্বাদশে ভিন্রাজ্যের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪,৫১৭। নবম-দশমের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৯৬১ জন। পরীক্ষায় বসেছেন ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ১৯২ জন। শতাংশের নিরিখে ৯১.৬২। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে আবেদন করেছিলেন দু’লক্ষ ৪৬ হাজার ৫৪৩ জন। শতাংশের নিরিখে পরীক্ষায় বসেছে ৯৩%। সংখ্যায় ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৪৯৭।