প্রিয়াঙ্কা মান্না। কলকাতা সারাদিন।
চলচ্চিত্র জগতে ইন্দ্রপতন। প্রয়াত শ্যাম বেনেগাল। খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক আজ সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে শ্য়াম বেনেগালের বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তাঁর কন্যা পিয়া বেনেগাল সংবাদমাধ্যমকে জানান, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ প্রয়াত হয়েছেন শ্যাম বেনেগাল।
সত্যজিৎ রায় এবং ঋত্বিক ঘটক সহ তাঁর আগে আর্টহাউস চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বিপরীতে, বেনেগাল একটি সর্বভারতীয় দর্শক এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশক পেয়েছিলেন। এতে তার কাজের পরিধি আরও প্রশস্ত হয়। তারপরও সিনেমা নির্মাণে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি লেখক-পরিচালক। যাত্রা (১৯৮৬) এবং ভারত এক খোঁজ (১৯৮৮) এর মতো ল্যান্ডমার্ক সিরিজ সহ তাঁর চিত্তাকর্ষক কাজের মধ্যে বেশ কয়েকটি ল্যান্ডমার্ক টেলিভিশন শো এবং ডকুমেন্টারি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জওহরলাল নেহেরুর বই ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়ার উপর ভিত্তি করে ৫৩ পর্বের ভারত এক খোঁজ একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প যা দর্শকদের একটি আকর্ষণীয় আখ্যানের মাধ্যমে ভারতের ৫,০০০ বছরের ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনী এবং নৈতিকতার সাথে পরিচিত করেছিল। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে, রাজ্যসভা টিভি বেনেগাল পরিচালিত একটি ১০ অংশের সিরিজ ‘সংবিধান’ সম্প্রচার শুরু করে, যা ভারতের সংবিধান তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেছিল।
শ্যান বেনেগাল ১৯৭৬ সালে পদ্মশ্রী ও ১৯৯১ সালে পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন। শ্যাম বেনেগালের উল্লেখযোগ্য ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে অঙ্কুর (১৯৭৩), নিশান্ত (১৯৭৫), মন্থন (১৯৭৬), ভূমিকা (১৯৭৭), মাম্মো (১৯৯৪), সর্দারি বেগম (১৯৯৬), জুবেইদা (২০০১)।
২০০৫ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছিলেন শ্যাম বেনেগাল। তাঁর শেষ ছবি মুজিব: দ্য মকিং অব আ নেশন। বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ও ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার যৌথ প্রযোজনায় ছবিটি গত বছর মুক্তি পায়।
শ্যাম বেনেগালের বহু ছবি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে যথাক্রমে জওহরলাল নেহরু ও সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে তাঁ নন-ফিচার ফিল্ম দর্শকমহলে সমাদৃত হয়েছে। দ্য মেকিং অব মহাত্মা কিংবা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস: দ্য ফরগটন হিরো তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি।
সুরজ কা সাতবাঁ ঘোড়া, ওয়েল ডান আব্বা, সমর, হরি ভরির মতো ছবিগুলিও বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। ১৯৭৯ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন পাম বিভাগে মনোনীত হয়েছিল নিশান্ত। বার্লিন ও মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হয়েছিল অঙ্কুর, কলিযুগ, সর্দারি বেগমের মতো ছবিগুলি।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে গত ১৪ ডিসেম্বর ছিল শ্যাম বেনেগালের ৯০তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে জমজমাট পার্টির আয়োজনও ছিল। অনেক তারকাদের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ এবং শাবানা আজমিও। শ্যাম বেনেগাল এবং বাকি দু’জন ধরা পড়েন এক ফ্রেমে।
ইনস্টাগ্রামে সেই ছবি শেয়ার করেছিলেন শাবানা আজমি। বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মজা করে ক্যাপশনে এও লিখেছিলেন, কী জানি কেন আমাদের আর কেউ একসঙ্গে সিনেমায় নেয় না?
শ্যাম বেনেগালকে ২০১২ সালে সাম্মানিক ডি লিট উপাধি দিয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ থেকে ২০১২ অবধি রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন শ্যাম বেনেগাল। পরিবার সূত্রে খবর, কয়েক বছর ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন শ্যাম বেনেগাল। সেই অসুস্থতাই সম্প্রতি বেড়ে যায়। রাখা হয়েছিল মুম্বইয়ের ওখার্ড হাসপাতালের আইসিইউতে। সেখানেই সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে তাঁর প্রয়াণ ঘটে। শ্যাম বেনেগালের প্রয়াণ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে গভীর শূন্যতা তৈরি করল। সংস্কৃতি জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।