সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
১০ দফা দাবি নিয়ে ধর্মতলার অনশনমঞ্চে আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বৃদ্ধি করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মঙ্গলবারই সেই অনশনমঞ্চে নতুন করে যোগ দিয়েছেন আরও দু’জন। বর্তমানে ধর্মতলায় অনশনে রয়েছেন সাত জন আর উত্তরবঙ্গে এক জন। তবু অনশনমঞ্চে এখনও অনড় আন্দোলনকারীরা। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে এবার পাল্টা আসরে নামল তৃণমূল কংগ্রেস। জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবির বিপরীতে পাল্টা ১৩ দফা দাবি নিয়ে ময়দানে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, এই ১৩ দফা দাবিও বিবেচিত হোক।
এদিন কুণাল বলেন, “চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দুর্নীতি মুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। সেটা করতে হলে তো সবার আগে চিকিৎসকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আশা করব, ওনারা আমার সঙ্গে সহমত হয়ে সেই দৃষ্টান্ত তৈরি করবেন।”
এরপরই চিকিৎসকদের উদ্দেশে ১৩ দফা দাবি রেখেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। কুণাল বলেন, “এখন থেকে আশা করব, সরকারি হাসপাতালের নিয়ম মেনে চিকিৎসকরা ডিউটি করবেন। প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন না। কমিশনের জন্য দামী ওষুধ লিখবেন না। বিভিন্ন সংস্থার স্পনসরে বাইরে বেড়াতে যাবেন না।” একই সঙ্গে তৃণমূল নেতা এও বলেন, “আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শিখাও।”
সেই ১৩টি দাবি কী কী?
- সব হাসপাতালে ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হোক। সঙ্গে তাঁদের ডিউটির সময় অনুযায়ী উপস্থিতি, রোগী দেখাটাও সুনিশ্চিত হোক।
- সরকারি হাসপাতালের কাজ ফেলে, সুবিধা মতো ডিউটি বদলে বাকি সময় প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করা চলবে না।
- প্রেসক্রিপশনে একই গুণমানের কমদামী ওষুধের বদলে ওষুধ কোম্পানির প্রভাবে দামী ওষুধ লেখা চলবে না। জেনেরিক টার্মে ওষুধ লিখুন, কোম্পানির ব্র্যান্ড নয়।
- ওষুধ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম ( পেস মেকারসহ) কোম্পানির স্পনসরশিপে অনুষ্ঠান, দেশবিদেশে ভ্রমণ চলবে না। ওঁরা সমাজসেবা করেন না। কমিশন, কাটমানির অভিযোগের বন্ধ/সুরাহা করতে হবে।
- কথায় কথায় বিভিন্ন পরীক্ষার নামে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কেউ যেন কমিশন না নেন।
- ডাক্তারদের ফি যাতে মানুষের নাগালে থাকে, তার কাঠামো চাই। প্রত্যেককে রশিদ দিতে হবে।
- হয় সরকারি, নইলে বেসরকারি বেছে নিন, দুটো একসঙ্গে কোনও নিয়ম দেখিয়ে চলবে না।
- সাধারণ মানুষের করের টাকার ভর্তুকিতে যাঁরা সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়বেন, তাঁদের সরকারি কাজেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোটি টাকা দিয়ে বেসরকারিতে পড়াদের কথা আলাদা।
- স্পেশালিস্ট, সিনিয়রদের ঠিকমতো ডিউটি করতে হবে। লবি করে কলকাতা পোস্টিং বা জেলায় গেলেও কৌশলী রস্টারে তিন/চার দিন কলকাতায় এসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস চলবে না। জেলার হাসপাতালে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।
- শূন্যপদ পূরণ হোক। পরিকাঠামো বাড়ুক। কিন্তু নিজেদের কর্মক্ষেত্রকে রোগীবন্ধু রাখার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি ডাক্তারদেরও নিতে হবে। কারণ সরকারি কাঠামোতে দুর্বলতা দেখিয়ে রোগীকে বেসরকারিতে যেতে বাধ্য করা/টেনে দেওয়ার অভিযোগ আছে, বন্ধ করতে হবে এসব।
- বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ভর্তিতে বিপুল টাকা, পড়তে টাকা, সেমিস্টারে ফেল করিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে পাশ- এইসব অভিযোগবন্ধনীতে কিছু ডাক্তারও আছেন। এসবে স্বচ্ছতা ও তদন্ত দরকার।
- বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কিছু কোটা দীর্ঘকাল আছে। মুখ্যমন্ত্রীর কোটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধ করেছেন। কিন্তু হাসপাতালের কোটাগুলি নিয়ে বহু অনিয়মের অভিযোগ, বহু ডাক্তার জানেন, সেগুলি বন্ধ হোক বা স্বচ্ছতা আনা হোক।
- চিকিৎসার গাফিলতিতে নির্দিষ্ট এফআইআর বাধ্যতামূলক হোক।