শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
উপনির্বাচনে ৬ কেন্দ্রেই হার বিজেপির। একুশের বিধানসভার নির্বাচনে যেখানে প্রায় রাতারাতি সাতাত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে জিতে বাংলার প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছিল বিজেপি, এই জায়গা থেকে মাত্র তিন বছরের মধ্যে হারাধনের দশটি ছেলের মতো অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে কমে চলেছে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা। 2021 সালে যেখানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৭৭, বর্তমানে তা এসে পৌঁছেছে টেনেটুনে ৬৬-তে। যেখানেই উপ নির্বাচন হচ্ছে সেখানেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে বাংলার বিজেপির। তবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বাংলার শাসক দল তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধীদল বিজেপি যেভাবে প্রথমে সন্দেশখালি এবং পরে আরজিকরের মত সোনার থালায় সাজিয়ে দেওয়া রাজনৈতিক ইস্যু হাতে পেয়েছিল, সেই ইস্যুকে ভোট বাক্সে জনসমর্থন হিসেবে পরিণত করতে না পারার ব্যর্থতা কার, এই নিয়ে প্রত্যেকটি উপনির্বাচনের পরে বিজেপির নেতাদের মধ্যে চাপান উতোর চলতেই থাকে। ব্যতিক্রম করো না শনিবার ৬ বিধানসভা উপনির্বাচনের ফল বেরোনোর পরেও।
গতবারের মতো এবারও হারের দায় নাম না করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দিকেই ঠেললেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, তিনি বিরোধী দলনেতা, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তিনি যুক্ত থাকেন না। পাশাপাশি এও বললেন, ‘হাতে মাত্র ১ বছর। নির্বাচনমুখী সংগঠন, আন্দোলনমুখী দল দরকার।”
ফল মোটামুটি ঘোষিত হয়ে যাওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাই না, যুক্তও থাকি না। তবে উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে একটা কথাই বলতে পারি, নির্বাচনমুখী সংগঠনের প্রয়োজন রয়েছে। সকলেই আমরা ২০২৬-এর জন্য অপেক্ষা করছি। এই ৬টা আসন নিয়ে আমরা কেউই ভাবিনি।”
তবে এই প্রথমবার নয়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলের খারাপ ফলের দায়ও নেননি শুভেন্দু। সেবারে কার্যত দায় ঠেলেছিলেন রাজ্য সভাপতির দিকেই। চলতি বছরেই ১৩ জুন শুভেন্দু বলেছিলেন, “সামগ্রিকভাবে দলকে প্রতিনিধিত্ব করি না। সংগঠন করি। সংগঠিত করার কাজটা আমার নয়। কেবলমাত্র আমার জেলাতে পার্টির সংগঠনের লোকেরা যেমন রাজ্যের নির্দেশিকাও পালন করেন, আমার পরামর্শটাও মেনে চলেন। এর বাইরে সাংগঠনিক ব্যাপারে আমি কোনওদিনই হস্তক্ষেপ করি না। ভবিষ্যতেও করার কোনও ইচ্ছা নেই।”
তবে দলের হারের দায় এড়াননি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, “উপনির্বাচনে এমনই হয়।” উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “কালিয়াগঞ্জের উপনির্বাচন, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর উপনির্বাচনে আমরা হেরে গিয়েছিলাম। একুশে কালিয়াগঞ্জ আমরা বিপুল ভোটে জিতেছি। প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ থাকার পরও জিতেছি। ২৪-এ আমরা লোকসভাতে জিতলাম। আবার ২৬-এ বিধানসভাতেও জিতব। ”
স্বাভাবিকভাবেই উপ নির্বাচনের ফলে ভীষণভাবে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল। বিজেপিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “নাচতে না জানলে উঠোন ব্যাঁকা। যে ক্লাস ওয়ানেই মুখ থুবড়ে পড়ছে, সে বলছে আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করবে। শুনলেও হাসি পায়, বিজেপিও ভোট চায়।”
