সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
সোমবার তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেই ঠিক হয়েছিল যে, শনিবার সংখ্যালঘু সেলের ডাকে সভা হবে। সেই সভায় দেশের সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো রক্ষার জন্য লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমেরা। একই সঙ্গে তৃণমূলের সভায় জুড়ে গিয়েছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও। ওপার বাংলায় যা চলছে তাকে ইতিমধ্যেই ‘দুর্ভাগ্যজনক এবং নিন্দনীয়’ বলেছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এ-ও বলেছেন যে, অন্য দেশের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার যে অবস্থান নেবে, সেটাই তৃণমূলের অবস্থান। কল্যাণ সমাবেশে বলেছেন, ”যে কোনও দেশেই সংখ্যাগুরুদের উচিত সে দেশের সংখ্যালঘুদের আগলে রাখা। নিরাপত্তা দেওয়া। ওখানে (বাংলাদেশে) যা হচ্ছে, তা সমর্থন করি না।”
কল্যাণের কথার রেশ ধরে একই কথা বলেন ফিরহাদও। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি নেই। কিন্তু ভারতের সংবিধানে তা রয়েছে। ফলে সংবিধানের মর্যাদা দিতে হবে। সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় মমতাই একমাত্র নেত্রী বলে উল্লেখ করেন কল্যাণ। আবার কল্যাণ এ-ও বলেছেন, ”আমি যেমন কালী, শিবের পূজারী, তেমন সংবিধানেরও পূজারী।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে কল্যাণের অভিযোগ, “বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর রামমন্দির তৈরি করেছেন। একইভাবে ওদের বাকি সম্পত্তি হাতিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে দাঙ্গা বাঁধাতে চাইছেন? কিন্তু জেনে রাখুন, তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মের লড়াই হতে দেব না। দরকার হলে আরও রক্ত দেব, কিন্তু হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ধ্বংস হতে দেব না।””
ফিরহাদ বলেন, “ক্ষমতায় টিকে থাকতে ধর্মের বিভাজন তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। কে কী খাবে, কী পরবে তা কি বিজেপি ঠিক করে দেবে? উত্তরপ্রদেশে সেটাই হচ্ছে, পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। এ জিনিস বরদাস্ত করার প্রশ্নই নেই। ওদের প্ররোচনায় পা দেবেন না।”
প্রসঙ্গত, এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে দল ও রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “ওয়াকফ আইনে পরিণত হলে ওয়াকফ ব্যবস্থাই ধ্বংস হয়ে যাবে। ২০২৪ সালে যেটা আনা হয়েছে, আমি মনে করি রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল। অথচ আমাদের সঙ্গে কোনও কনসাল্ট করা হয়নি।”
এদিন এ প্রসঙ্গে কল্যাণ বলেন, “ওয়াকফ কী? আল্লার সম্পত্তি। সেটাকে সংরক্ষণের জন্য সংবিধান একটা সিস্টেম করে দিয়েছে। সেটাকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আসলে মুসলিম সম্পত্তিগুলির দখল নিতে সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারাকে আঘাত করার জন্য এই বিল আনা হয়েছে।”
তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কথায়, ‘ভারতের সংবিধান ১২৬ ধারা বলছে, ধর্মীয় আচরণের স্বাধীনতা। একজন মুসলিমের অধিকার রয়েছে। তাহলে সেই সম্পত্তিতে যদি আঘাত দেওয়া হয়, সেই চিন্তাভাবনা, সেই বিল ভারতীয় সংবিধানের ১২৬ নম্বর ধারাকে লঙ্খন করে। ভারতবর্ষের বুকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিয়েছে সংবিধান। তাদের আঘাত করা যায় না। আমি হিন্দু হলেও আমার যদি মন্দির থাকে, আমার যদি জায়গা থাকে, আমার যদি ধর্মীয় আবেগ থাকে, সেই আবেগকে যেমন কেউ আঘাত দিতে পারে, তেমনি সংবিধান অনুযায়ী মুসলিম মানুষের ধর্মের আবেগকে নষ্ট করা যায় না’।