সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
ছিল বেড়াল, হয়ে গেল রুমাল। অনেকটা তেমন ঘটনা!
আর জি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে পুজোমণ্ডপে স্লোগান তোলা ধৃতদের জামিন হয়েছে শুক্রবার। বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে কলকাতা হাই কোর্ট ৯ জনকেই জামিন দিয়েছে।
তার ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধেবেলা তাঁরা অবশেষে মুক্তি পেলেন। কিন্তু ধৃতদের পরিচয় নিয়ে ধন্দ দেখা গিয়েছে। জামিনের সময় এক ধৃতের নাম বদলে গেল মুক্তির পর!
এমনই তথ্য তুলে ধরে সোশাল মিডিয়ায় সরব তৃণমূলের মিডিয়া কমিটির অন্যতম সদস্য কুণাল ঘোষ। জামিনের নথিতে যাঁর নাম সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়, থানায় জামিনের নথি পেশের সময় তাঁর নামই হয়ে গেল আনিসুর রহমান! বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বুধবার অর্থাৎ ষষ্ঠীর দিন অভয়া-পরিক্রমায় বেরিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এক নামী পুজোমণ্ডপের সামনে স্লোগান তোলায় প্রতিবাদীদের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালত তাঁদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। তবে পরেরদিন ধৃতদের ৯ জনেরই জামিন মঞ্জুর করেন হাই কোর্টের অবকাশকালীন বিশেষ বেঞ্চের বিচারক শম্পা সরকার। তাঁর পর্যবেক্ষণ, কোনও ধর্মীয় উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয়নি, তাই ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে রাখার অর্থ নেই। তবে শুক্রবার সন্ধে নাগাদ জামিনের নির্দেশ এলেও প্রক্রিয়াগত কারণে সেদিন তাঁরা মুক্তি পাননি। শনিবার অবশেষে রবীন্দ্র সরোবর থানা জামিনের নথি দেখে ৯ জনকে ছেড়ে দেয়।
আর এই নথি নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিলতা। তাতে জামিনের নথিতে ধৃতের নাম সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়, আর থানায় পেশ করা নথি অনুযায়ী, তাঁর নাম হয়ে গিয়েছে আনিসুর রহমান! এই নামবদলের নথি সংক্রান্ত তথ্য সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল ঘোষ। X হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ”কী কান্ড। মন্ডপে বিক্ষোভে গ্রেপ্তার; গতকাল হাইকোর্টে জামিন পেল সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়। আজ থানায় জামিনের নথি পেশের সময় নাম বেরলো আনিসুর রহমান। এখনও জটিলতা চলছে।” অভিযোগ, তিনি নিজের পরিচয় গোপন করেছেন।
তৃণমূলের তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য শুধু বলেন, ‘পুজো মণ্ডপে স্লোগান দেওয়া ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের কাছে নিজের আসল নাম আনিসুর রহমান লুকিয়ে সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় বলে কেন পরিচয় দিয়েছিলেন? সিপিএম মাত্রই কি জন্মগত চিটিংবাজ?’
‘সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়’-র নাম নেই রায়ের কপিতে
এমনিতে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের তরফে যে রায়ের কপি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ‘সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়’ বলে কারও নাম নেই। হাইকোর্টের রায়ের কপিতে জহর সরকার, চন্দ্রচূড় চৌধুরী, কুশল কর, দীপ্তমান ঘোষ, ঋতব্রত মল্লিক, উত্তরণ সাহা রায়, আইসার রহমান, নাদিম হাজারি এবং সুজয় মণ্ডলের নাম আছে।
রায়ের কপিতে ‘আইসার রহমান’ আছে
যদিও প্রাথমিকভাবে যখন নয়জনকে গ্রেফতারির খবর ছড়িয়েছিল, তখন ধৃত হিসেবে জহর সরকার, চন্দ্রচূড় চৌধুরী, কুশল কর, দীপ্তমান ঘোষ, ঋতব্রত মল্লিক, উত্তরণ সাহা রায়, নাদিম হাজারি এবং সুজয় মণ্ডলের পাশাপাশি ‘সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়’-দের নাম উঠে এসেছিল। হাইকোর্টের রায়ের কপিতে বাকি আটজনের নাম থাকলেও ‘সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়’-র কোনও উল্লেখ নেই। রায়ের কপিতে ‘আইসার রহমান’ বলে একজনের নাম আছে।