শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
এসএসবির প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এরাজ্যে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার রাতেই বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামেন শাহ। আর এদিন সকালে শিলিগুড়ির এসএসবির প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। যখন দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা, সেই সময় এই রাজ্যে এলেন শাহ। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর এই সফর ঘিরে নজর ছিল সকলেরই। কিন্তু সুন্দর দক্ষতা নিয়ে এদিন সেই সম্পূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গেলেন শাহ। এদিন এসএসবি প্রসঙ্গ ছাড়া আর কোনও কিছুই উল্লেখ করলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এদিন কার্যত, শিলিগুড়িতে এসএসবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তিনি সাফ ভাষায় বললেন, “এসএসবি আছে বলেই পূর্বাঞ্চলের মানুষ নিশ্চিন্তে বসবাস করছে। কেননা তারাই ক্রমাগত নিরাপত্তা দিয়ে চলেছে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য গুলিকে”।
শাহর কথায়, “পূর্বাঞ্চলে নকশাল দমনেও এসএসবির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বিহার ঝাড়খণ্ড যে নকশাল মুক্ত হয়েছে, তাঁর জন্যে একমাত্র এসএসবির ভূমিকা রয়েছে। এসএসবি সেখানে সক্রিয়তা দেখিয়েছে বলেই, নকশাল প্রভাব কমেছে রাজ্য গুলিতে। একটা সময় ছিল, যখন বিহার, ঝাড়খণ্ডে নকশাল হানা মাত্রাতিরিক্ত ছিল। মানুষ সেখানে থাকতে ভয় পেত। কিন্তু এসএসবিকে আরও বেশি শক্তিশালী করায়, তারা মাওবাদী দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে”।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, “রাষ্ট্রীয় স্তরের সম্মান পেয়েছে এসএসবির জওয়ানরা। তবে তারা এমনি এমনি এই সম্মান পায় নি। তারা তাঁর জন্যে কসরৎ করেছে। গত তিন বছর ধরে সীমান্তে জিরো টলার্যান্স নীতি মেনে চলেছে এসএসবির জওয়ানরা। ১৫০০-রও বেশি মাওবাদীকে নিকেশ করেছে তারা। ৬০০-রও বেশি মাওবাদীকে গ্রেফতার করেছে। আরও বহু মাওবাদী তাঁদের ভয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। এই ভাবেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে এসএসবি”।
অমিত শাহর কথায় শুধু পূর্বাঞ্চল নয়, “শিলিগুড়িতেও ভালো প্রভাব রেখেছে এসএসবি। শিলিগুড়ি করিডরে যে ভাবে এসএসবি ঘাঁটি গেড়েছে তাতে বাইরের কোনও অসাধু শক্তি দেশে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। তাছাড়া, নেপাল, ভুটানের সীমান্ত নিয়ে আমার কোনও চিন্তা নেই। কেননা, নেপাল-ভুটানের ২,৪৫০ কিমি সীমান্ত সুরক্ষিত রয়েছে শুধুমাত্র এসএসবির জন্য। সীমান্তে মাদক ও বেআইনি অস্ত্র পাচার রুখে দিয়েছে এসএসবি। এই ভাবে নেপাল, ভুটান সীমান্তেও তৎপর এসএসবির জওয়ানরা”।
বস্তুত, নেপাল এবং ভুটানের প্রায় ২,৪৫০ কিলোমিটার সীমান্তে ‘নো ম্যান্ডস ল্যান্ডে’ জ়িরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে এসএসবি। শাহ জানান, গত তিন বছরে ১১০০ অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে সশস্ত্র সীমা বল। ১০০০ একরের বেশি জমি জবরদখল মুক্ত করেছে তারা। চার হাজারের বেশি পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৮১ জন মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছেন জওয়ানেরা। অভিযানে ৮০১ জনকে পাচারের আগেই উদ্ধার করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ২৩১ জন নাবালক-নাবালিকা।
এদিন কার্যত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত, এই ভাবেই এসএসবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকতে দেখা যায় অমিত শাহকে। আর কোনও বিষয়কেই এদিন গুরুত্ব দেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শিলিগুড়ি থেকে উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্তে কর্মরত বিএসএফ জওয়ানদের জন্য একটি আধুনিক ভবনের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, সাড়ে তিন একর জমির উপরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট চারটি ভবন তৈরি হয়েছে। শাহ ওই ভবন উদ্বোধনের সময়ে পেট্রাপোল সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার, বনগাঁর কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডল-সহ বিভিন্ন দফতরের আধিকারিক। শান্তনু জানান, কলকাতা থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু করার জন্যও তিনি রেলমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। শিলিগুড়িতে শাহের সঙ্গে এসএসবি-র প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মণেরা। এসএসবি-র ৩৫ জন সেনা জওয়ান এবং আধিকারিককে সেবাপদক দিয়ে সম্মানিত করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।