সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
এসআইআর-র নাম করে এনআরসি করানো হচ্ছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় এনআরসি হলে আগুন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন মমতা। বিএলওদের ডেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাদের ইচ্ছেমতো কাগজ তৈরি করতে বলা হচ্ছে বলেও দাবি করেন মমতা। এই সবকিছুর পিছনে দিল্লির একজন মীরজাফরের হাত আছে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। যিনি নিজেও দুর্নীতিতে যুক্ত। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুজোর পর অসম সরকার এনআরসি-র নোটিস পাঠাচ্ছে। এসআইআর-র নাম করে এনআরসি করার চেষ্টা চলছে, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ধিক্কার। একজন মীরজাফর আছেন দিল্লিতে। এনআরসি নিয়ে খেলার চেষ্টা করবেন না। তাহলে আগুন জ্বলবে। গায়ের জোরে বাংলা দখল করতে পারবেন না। বাংলার মানুষ আপনাদের বিশ্বাস করে না। বাংলাকে আপনারা বঞ্চিত করেছেন। বাংলার সব প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছেন। তাড়াহুড়োয় কাজ করতে গিয়ে যদি কোনও সম্প্রদায়ের কোনও নাগরিকের নাম বাতিল হয়, তাহলে বলব, আগুন নিয়ে খেলবেন না। এখন বাংলায় দুর্যোগ পরিস্থিতি। বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি, কাগজপত্র সব ভেসে গিয়েছে। কোথা থেকে মানুষ এখন কাগজ দেবে? কেউ কেউ আবার উৎসবের ছুটিতে বাইরে আছেন। তাঁরাই বা এখন কাগজ দেখাবেন কীভাবে?’
মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘এক বিজেপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কীভাবে বলতে পারেন যে ১.৫ কোটি ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে? তার মানে কি এই পরিকল্পনা বিজেপি অফিসে তৈরি করা হয়েছে? আর নির্বাচন কমিশন স্ট্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করবে? ওরা বাদ দেওয়ার কে?’ তাঁর আরও দাবি, ‘এখন ভোট নয়, তাও কেন নির্বাচন অফিসারদের ডেকে বৈঠক? নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিয়োগ। দু’মাসের মধ্যে মানুষ কীকরে তথ্য দেবে? বর্ষা, বন্যায় মানুষের সব নথি ভেসে গেছে।’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর হুমকির সুরে বলেছেন, দেড় কোটি রোহিঙ্গার নাম বাদ যাবে। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে মমতার প্রশ্ন, ‘এসআইআরের কাজ শুরু হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কীভাবে ওই কথা বললেন? সবকিছুর পিছনে কি মীরজাফরের সিদ্ধান্ত? উনি যা বলবেন, তাই হবে? আপনারা বাংলার বকেয়া দেন না, বাংলাকে সবক্ষেত্রে বঞ্চিত করেন আর ভোট এলেই আপনাদের টাকা বেরয়! মনে রাখবেন, বাংলায় প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষ লড়াকু। তাঁরা লড়াই করে ঠিক নিজেদের অধিকার বুঝে নেবে। আপনারা তাঁদের দমিয়ে রাখতে পারবেন না।’

নদিয়ার দুই নাগরিক এনআরসি নোটিস পেয়েছেন পুজোর পরপর। সেই তথ্য জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এসআইআরের নামে কেন এনআরসি নোটিস পাঠাল? কোন অধিকারে বাংলার মানুষকে অসম সরকার এই নোটিস পাঠাচ্ছে? সামনে এসআইআর আর পিছনে কী? এনআরসি করবেন গায়ের জোরে? পারবেন না কোনওদিন। এসআইআরের নামে ভোট কাটার ষড়যন্ত্র। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে গৈরিকীকরণের চেষ্টা চলছে।’এই মুহূর্তে রাজ্য সফরে এসেছে নির্বাচন কমিশনের এক প্রতিনিধিদল। রয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জ্ঞানেশ ভারতী। তাঁরা বৃহস্পতিবার কোলাঘাটে গিয়ে বিএলএ-দের ডেকে বৈঠক করেছেন। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিশানা করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে। তাঁর প্রশ্ন, ‘এখন তো ভোট নয়। এখনও কমিশনের অধীনে যায়নি রাজ্য। তবে কেন বিএলএ-দের নিয়ে বৈঠক করছেন?’ নাম না করে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘বেড়ে খেলবেন না, দুর্নীতির অনেক অভিযোগ আছে, সময় হলে ঠিক প্রকাশ করব।’