রাহুল সিংহ মজুমদার। কলকাতা সারাদিন।
কালো চিটচিটে তেলে ভরে যাচ্ছে, দেওয়াল, কার্নিস, মেঝে। ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। ৫০ বছরের বেশি আগে তৈরি হয়েছে বাড়ি। একটু একটু করে দোতলা, তিনতলা তৈরি হয়েছে। আস্ত একটি তিনতলা বাড়ির একাংশ থেকে গড়িয়ে পড়ছে তেল! কোথা থেকে আসছে, এই চিটচিটে পদার্থ আসলে কী, তা ভেবেই পাচ্ছেন না বাড়ির বাসিন্দারা।
প্রত্যেকদিনই বেড়েই চলেছে এই তেল গড়ানোর পরিমাণ। সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় খবর দিয়েছেন বাড়ির বাসিন্দারা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাড়ির বাসিন্দারা রীতিমতো চিন্তায় রয়েছেন। বাড়ির মালিকের নাম রতন সরকার। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্য সহ এলাকার অন্যান্য বাসিন্দারাও এই ঘটনায় হতবাক। একদিন বা দু’দিন নয়, বছর খানেকেরও বেশি সময় ধরে এই ঘটনায় আতঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা।
ইতিমধ্যে খবর দেওয়া হয়েছে ONGC, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের IIPC ডিপার্টমেন্ট, রাজপুর সোনারপুর পুরসভা ও নরেন্দ্রপুর থানায়। লিখিতভাবে জানানো হয়েছে পুরো বিষয়টি।
বাড়ির সদস্যরা জানিয়েছেন, বছর কয়েক আগে বাড়িটি রঙ করাতে গেলে প্রথমে চোখে পড়ে ওই তৈলাক্ত পদার্থ। দেখা যায়, কালো হয়ে যাচ্ছে দেওয়ালের অংশ। এরপর তাঁরা আর বিষয়টায় গুরুত্ব দেননি। পরে বাড়তে থাকে পরিধি। বাইরের দেওয়ালে হাত দিলেও বোঝা যাচ্ছে, তেল গড়িয়ে পড়ছে।
কেন এই তেল বেরচ্ছে? তাহলে কি কোথাও তেলের খনি আছে? নাকি তেলের কোনও পাইপলাইন বাড়ির কাছে দিয়ে গিয়েছে? সেই পাইপলাইন সংস্কারের সময় কি ফেটে গিয়েছে? তা থেকে কি তেল বেরতে শুরু করেছে? এমন নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার ১২৩ ফরতাবাদ রোডের মজুমদার পাড়ায় রতন সরকারের বাড়িতে যান রাজপুর সোনারপুর পুরসভার একটি প্রতিনিধি দল। আগামী মঙ্গলবার আসার কথা রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টর সদস্যদের।
বিষয়টি জানতে পেরে নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার ১২৩ ফরতাবাদ রোডের মজুমদার পাড়ায় রতন সরকারের বাড়িতে যান রাজপুর সোনারপুর পুরসভার একটি প্রতিনিধি দল। আগামী মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজিকাল ডিপার্টমেন্টর সদস্যরাও যাবেন সেখানে। পুরসভার পক্ষ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, যে তেল বের হচ্ছে, তা দাহ্য নয়। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজপুর সোনারপুর পুরসভার পুর পারিষদ সদস্য নজরুল আলি মণ্ডল।
বাড়ির মালিক রতন সরকার বলেন, “বাড়ির একাংশ কালো হয়ে রয়েছে। তেলের মতো তা মাটিতে পড়ছে। ভয় লাগছে ভেঙে না পড়ে। পুরসভাকে জানানো হয়েছে।” গৃহকর্তৃ শম্পা সরকার জানান, “কয়েক বছর আগে বাড়িতে রং করাই। সেই সময় বিষয়টি চোখে পড়ে। রং হয়ে যাওয়ার পর আর সেই ভাবে নজর দিইনি। তবে মাস খানেক ধরে দেখছি এই কালো ভাব আরও বেড়ে যাচ্ছে। ক্রমশ তা বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ছে।”
খবর পেয়ে বাড়টিতে যান রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার সদস্য নজরুলআলি মণ্ডল। তিনি বলেন, “ইঞ্জিনিয়াররা বাড়িটি ঘুরে গিয়েছেন। বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি দল মঙ্গলবার এখানে আসবে। আশা করছি সমাধান সূত্র বেরবে।” এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে মজুমদার পাড়ায়।