শৌভিক তালুকদার। কলকাতা সারাদিন।
যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে মোদীই! বাংলাদেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে বড় দায়িত্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। গত কয়েকমাস ধরে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে রাতারাতি সে দেশে বদলে গিয়েছে ছবিটা। সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর লাগাতার অত্যাচার সহ একাধিক ইস্যুতে সরগরম পরিস্থিতি।
যার প্রভাব পড়েছে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কেও। এই অবস্থায় মোদীর মার্কিন সফরের (PM Modi US visit) নজর রয়েছে বাংলাদেশেরও। আর সেখানে পরিস্থিতি সামাল দিতে মোদীর উপরেই ভরসা ট্রাম্পের ((Donald Trump)।
আমেরিকার মসনদে দ্বিতীয়বার বসার পর প্রথমবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হোয়াইট হাউসে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। যেখানে বাণিজ্য থেকে অভিবাসন, একাধিক ইস্যুতে আলোচনা হয় বলে খবর। এরপরেই যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন মোদী-ট্রাম্প। আর সেখানেই বাংলাদেশ সঙ্কট নিয়ে সাংবাদিকরা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করেন। এবং সেখানকার সঙ্কটে মার্কিন প্রভাব নিয়েও সাংবাদিকরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।
এর জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, বাংলাদেশে যে সঙ্কট চলছে তাতে কোনও ভাবেই আমেরিকার ভূমিকা নেই। দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) এই বিষয়ে কাজ করছে। এমনকী শত বছর ধরে ভারত কাজ করছে বলে আমি জেনেছি। ফলে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি মোদীর হাতেই ছাড়ছেন বলে মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এহেন বার্তা আগামিদিনে বাংলাদেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকায় সরকার বদলানোর পর ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সমীকরণও বদলেছে। গত বছরের ৫ অগস্ট বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে আসেন। এরপর নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তৈরি হয় অন্তর্বর্তী সরকার। আমেরিকার মসনদে তখনও জো বাইডেন, অর্থাৎ ক্ষমতায় তখন ডেমোক্র্যাটদের সরকার। সেই সময় ইউনূসের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকা বলেছিল, ‘আমরা বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ আমেরিকা এভাবে পাশে দাঁড়ানোয় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন ইউনূস।
কিন্তু রিপাবলিকানরা আমেরিকার ক্ষমতায় ফেরার পর সেই স্বস্তি উধাও হয়েছিল যায় আগেই। আর বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ইউনূস সরকারের রাতের ঘুম কতটা আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এদিন হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সাংবাদিকরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তর দেন, “বাংলাদেশের বিষয়টা মোদী দেখবেন।” লম্বা উত্তর না দিলেও ঢাকায় যে বার্তা পৌঁছে গিয়েছে, তেমনটাই মনে করছেন কূটনীতিকরা।

একদিকে যখন বাংলাদেশ কথায় কথায় ভারতকে দুষছে, হাসিনার মুখ বন্ধ করার জন্য চাপ দিতে চাইছে, তখন ট্রাম্পের বক্তব্য প্রচ্ছন্নভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে বাংলাদেশ নিয়ে শেষ কথা বলবেন মোদীই!
সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলা নিয়ে মার্কিন নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশকে সতর্ক করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় আসার পরেই সমস্ত ফান্ড বন্ধের নির্দেশ দেন। সেই মতো বাংলাদেশে সব প্রজেক্টে আর্থিক সাহায্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উন্নতিতে কয়েকশো কোটি টাকা আমেরিকা সাহায্য করে। এছাড়াও স্বাস্থ্য সহ একাধিক ক্ষেত্রে মার্কিন সাহায্য পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ট্রাম্পের নির্দেশে সব বিন্ধ। যা প্রবল চাপে রেখেছে ইউনূস সরকারকে।