সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
এবারের গঙ্গাসাগরে রেকর্ড ভিড় হবে বলে আগে থেকেই দাবি করেছে রাজ্য সরকার। এই কদিনে ভক্ত সমাগম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে বুধবারই সংখ্যাটা ১ কোটি ছুঁয়ে ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। গঙ্গাসাগরকে বলা হয়ে থাকে ‘মিনি ভারত’। কারণ প্রত্যেক বছর বহু ভাষাভাষি মানুষের সহাবস্থান হয়ে ওঠে গঙ্গাসাগর। মঙ্গলবার ৮৫ লক্ষের বেশি মানুষ গঙ্গাস্নান সেরে ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তবে এত ভিড়ের মধ্যেও ভক্তদের সুরক্ষায় কড়া নজর রেখেছে সরকার। কারও কোনও সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৫৮ মিনিট থেকে শুরু করে বুধবার সকাল পর্যন্ত রয়েছে মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নানের সময়সীমা। কিন্তু সেই সময় শুরুর আগে থেকেই সাগর স্নানে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকেই সাগর স্নানে এসেছেন পুন্যার্থীরা। সংক্রান্তি তিথির ভিড় এড়াতেই তাঁরা আগে থেকে সাগর স্নান সেরে কপিল মুনির মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশ জুড়ে যেমন মহাকুম্ভ মেলাকে নিয়ে জনজোয়ার দেখা গিয়েছে, তেমমই জনস্রোত দেখা গেল গঙ্গাসাগর মেলাতেও। আজ মঙ্গলবার মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে এসে মকর স্নান সারছেন অগণিত ভক্তবৃন্দ। তবে এখনও পর্যন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এদিকে ঠাণ্ডার পরিমাণ কিছুটা কম থাকলেও ভোরে ঠাণ্ডা ছিল যথেষ্ট। তবে মকর স্নানের তাগিদে সেই ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে গঙ্গাসাগরে ডুব দেন অসংখ্য ভক্ত। আজই যেহেতু মকর সংক্রান্তি তাই ভোররাত থেকে ভিড় উপচে পড়ে সাগরে। বহু মানুষ এই মকর সংক্রান্তির স্নান উপলক্ষ্যে গঙ্গাসাগর মেলায় এসেছেন বলেই মনে করছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। রবিবার মৃত্যু হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা অবদেশ তিওয়ারির। সোমবার আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এবার মহাকুম্ভের কারণে সাগর মেলায় তুলনামূলক ভিড় কম হওয়ার কথা। কিন্তু সাধু-সন্তরাও যথেষ্ট পরিমাণে এসেছেন।
মঙ্গলবারই গঙ্গাসাগরে পূণ্যস্নান করতে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ৭৬ বছর বয়সী ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা রমেশ দুবে। শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগে আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে দুপুরেই গঙ্গাসাগর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে ডুমুরজলা হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে নিয়ে আসা হয়। তারপর সেখান থেকে গ্রিন করিডোর করে কলকাতার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে, লাখান সিং নামে ৭৫ বছর বয়সি মধ্যপ্রদেশের এক বাসিন্দাকেও একইভাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে হাওড়ায় নিয়ে আসা হয় এবং এখান থেকে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, গঙ্গাসাগরে তীর্থযাত্রীদের সহায়তায় ১৪২টি সমাজসেবী সংগঠনের ১০ হাজারের বেশি সমাজসেবক দিনরাত কাজ করে চলেছেন। এছাড়া তিনি ‘ই-পরিচয়’, ‘ই-অনুসন্ধান’, ‘বন্ধন’ সহ একাধিক প্রকল্পের কথা আরও একবার মনে করিয়ে দেন।পুণ্যার্থীদের সুরক্ষার্থে ১৩ হাজারেরও বেশি পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। ৪৪টি ওয়াচ টাওয়ার, ১৮টি অ্যান্টিক্রাইম পেট্রোলিং টিম, ৫০টি ফুট পেট্রোলিং টিম, ১৮টি মিসিং পার্সন স্কোয়াড, ২টি স্নিফার ডগ, ২৮টি রিভার পেট্রোলিং টিম, ২৩টি কো-অর্ডিনেশন টিম দিন-রাত মেলা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে।