সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
হাওড়ার ঘোষপাড়ায় হুগলির চণ্ডীতলা থানার ওসির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উঠে এল সেই তথ্যই। জানা গিয়েছে, বান্ধবীর সঙ্গে বচসা চলাকালীন নিজেই নিজের হাতে গুলি চালিয়েছেন চণ্ডীতলা থানার অপসারিত ওসি জয়ন্ত পাল। তবে সার্ভিস রিভলভার নয়।
বেআইনি দেশি বন্দুক থেকে গুলি চালিয়েছিলেন তিনি। সেই বন্দুকও উদ্ধার করেছে শিবপুর থানার পুলিশ।
পুলিশের জেরায় তিনি বলেন, তাঁকে লক্ষ্য করে কেউ গুলি চালিয়েছে। কিন্তু তাঁর বান্ধবী টিনা দাম ও গাড়িতে থাকা অন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে জানা গিয়েছে, বান্ধবীর সঙ্গে বচসা চলাকালীন নিজের হাতে অন্য হাত দিয়ে গুলি চালিয়েছেন জয়ন্তবাবু। যে রিভলভার দিয়ে গুলি চালিয়েছেন সেটি একটি বেআইনি দেশি পিস্তল। ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে একটি ভ্যাট থেকে পিস্তলটি উদ্ধার করেছে শিবপুর থানার পুলিশ।
ওদিকে জয়ন্ত পালের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ করতে শুক্রবার চণ্ডীতলা থানায় যায় হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষাণু রায়ের নেতৃত্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম। জানা গিয়েছে, বিভাগীয় তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে জয়ন্তবাবুর বিরুদ্ধে।
ওদিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে যে বেসরকারি হাসপাতালে জয়ন্ত রায়কে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানেও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের পুলিশকর্মী বলে দাবি করেছিলেন জয়ন্তবাবু। যদিও তাঁরা ছিলেন জয়ন্তবাবুর বান্ধবী টিনা দামের বন্ধু। ওদিকে একজন ওসি বেআইনি দেশি পিস্তল নিয়ে কেন ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সেই প্রশ্নও উঠছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে হাওড়ার ঘোষপাড়া পেট্রোল পাম্পের কাছে গুলিবিদ্ধ হন চন্ডীতলা থানার ওসি। সেখানে একজন মহিলার উপস্থিতি ছিল। সেই মহিলা জয়ন্ত পালের পূর্ব পরিচিত বলে জানা গেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে জলঘোলাও হয় বিস্তর।
জয়ন্তবাবুর গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কয়েকটি মদের বোতল, সেক্স টয় সহ বিভিন্ন সামগ্রী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিস আধিকারিকের বান্ধবী সহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। তদন্ত করে দেখার জন্য হুগলি পুলিসের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ হাওড়ার সাঁকরাইলের পোদরা এলাকায় একটি পার্লারে গিয়েছিলেন জয়ন্ত পাল। পার্লারটি তাঁরই তরুণী বান্ধবীর। এরপর তাঁরা একটি ফ্ল্যাটে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে তাঁরা যান হাওড়ার একটি শপিং মলে। সেখানে বান্ধবীকে প্রায় ২৩ হাজার টাকার জিনিসপত্র কিনে দেন ওই পুলিস আধিকারিক। তখন থেকেই দু'জনের মধ্যে বচসা চলছিল। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ একটি ব্যক্তিগত নীল রঙের চারচাকা গাড়িতে চেপে নৈশবিহারে বেরনোর পর চাপানউতোর আরও বাড়ে।

গাড়িতে এই দু’জন ছাড়া শিবপুরের বাসিন্দা দুই যুবক ও বেলঘরিয়ার এক রূপান্তরকামীও ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। নেতাজি সুভাষ রোডের ঘোষপাড়া পেট্রল পাম্পের কাছে গাড়িটি দাঁড়ায়। নেমেই পাশের একটি গলিতে ঢুকে যান প্রত্যেকে। ফুটেজে দেখা গিয়েছে, গলি থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেরিয়ে গাড়ির সামনে এসেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন চণ্ডীতলা থানার আইসি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পথচলতি একটি গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান বাকিরা।