শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“আজ মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিংকে, উত্তরবঙ্গকে বরবাদ করতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন খালি জমির কথা। কিন্তু খালি জমি চা বাগানের থাকলে সেটা তো সরকারকে দিয়ে দিতে হবে। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে খালি জমির কথা বলছেন সেখানে খালি জমি কোথায়!” এভাবেই উত্তরবঙ্গে চা বাগানের জমি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে বিষ্ফোরক অভিযোগ করলেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা।
চা বাগানের পরিত্যক্ত জমি উদ্যোগপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য যে সরকারি ভাবনাচিন্তা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা বিজেপির। বুধবার দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা তীব্র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রাজ্যপালের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। গোটা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তারিত জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে চা বাগানের ১৫ শতাংশ জমি উদ্যোগপতিদের দেওয়া হবে। এবার ২০২৫ সালে এসে বলছেন সেই জমির পরিমাণ বাড়িতে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। চা বাগানের জমি উদ্যোগপতিদের দেওয়ার কথা বলছেন। এটা পুরো বেআইনি। এটা ভারতের সংবিধানের বিরুদ্ধে। আপনি কল্পনা করুন। দার্জিলিং, তরাই ডুয়ার্সে ৪০০ চা বাগান রয়েছে। গড়ে ১০০০ একর জমি প্রতি চা বাগানে। তার মানে ৪ লাখ একর জমির মধ্য়ে ১ লাখ ৩০ হাজার একরের বেশি জমি উদ্যোগপতিদের ফ্রিতে দিতে চাইছেন। আমি বলছি মুখ্যমন্ত্রীকে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে ১ হাজার একর জমির ব্যাপার ছিল। কিন্তু দার্জিলিং, তরাই ডুয়ার্সের ক্ষেত্রে এক লাখ ৩০ হাজার একরের বেশি জমি ফ্রিতে উদ্যোগপতিদের দিতে চাইছেন। নিয়মে বলা রয়েছে চা বাগানের জমি যদি আপনি অন্য কোনও ভাবে ব্যবহার করতে চান তবে সেখানে টি বোর্ডের অনুমোদন দরকার। …আমার আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি কখনও তিনি বলছেন ১৫ শতাংশ জমি, কখনও বলছে ৩০ একর জমি, কখনও বলছেন ৩০ শতাংশ জমি…”
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “উত্তরবঙ্গে বিভ্রান্তিকর খবর ছড়ানো হচ্ছে। তার সঙ্গে আছে ভূতুড়ে রাজনৈতিক দল। বলা হচ্ছে চা-বাগানের জমিতে পর্যটন হবে। এটা একেবারেই নয়। চা-বাগানের জমি রাজ্য সরকারের। তা লিজ দেওয়া হয়। চা-পাতা যেখানে উৎপন্ন হয় সেই জমির সঙ্গে কোনও আপস করা হবে না। যেখানে চা-পাতা উৎপন্ন হয় না সেটা দেওয়া হবে হোটেল, রিসর্ট অথবা হোম স্টে করার জন্য। আগামী তিন বছরের জন্য ৬টি ধুঁকতে থাকা চা-বাগান লিজে দেওয়া হচ্ছে। যাতে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারে। চা পর্যটনে এবং কর্মসংস্থান গড়ে তোলার জন্যও পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

রাজু বিস্তা বলেন, “আজ মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিংকে এবং উত্তরবঙ্গকে বরবাদ করতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন খালি জমির কথা। কিন্তু খালি জমি চা বাগানের থাকলে সেটা তো সরকারকে দিয়ে দিতে হবে। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে খালি জমির কথা বলছেন সেখানে খালি জমি কোথায়! সেখানে হয় চা শ্রমিকদের ঘর রয়েছে বা তাঁদের চাষ আবাদ হচ্ছে। এই জমি আমাদের পূর্ব পুরুষের জমি ছিল। এই চা বাগান তাঁরা তৈরি করেছিলেন। তাঁদের জমির অধিকার না দিয়ে সেই জমি উদ্যোগপতিদের দিয়ে দিচ্ছেন। আমি বলে দিচ্ছি মমতাদিদি যদি জোর করে নিয়ম লাগু করতে চান, তবে ভবিষ্যতে যা ফলাফল হবে তার দায় নিতে হবে মমতা দিদিকে।”