শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যের ২৯৪ বিধানসভা কেন্দ্রের থেকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে নজর কেড়ে নিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র। কারণটা আর কিছুই নয়, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে নন্দীগ্রাম থেকে বিজেপির টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও সেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মামলা আজও ঝুলে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। তবে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে যখন মাত্র এক বছর বাকি, সেই সময় আরো একবার জল্পনা তৈরি হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারী লড়াইয়ের।
নন্দীগ্রামে হেরে যাওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে যেতে এসেছিলেন। আর এবারে নন্দীগ্রাম থেকে কলকাতার ভবানীপুরে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের ওয়ার্ডে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার রাতে কলকাতায় রাজ্য বিজেপির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং নিজের অনুগামীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন শুভেন্দু। সেখানেই আপাতত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে আগামী ১ মে ভবানীপুরের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি, তার কাছেই নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় খুলবেন শুভেন্দু। জানা গিয়েছে, ১০০ জনের বেশি কর্মী নিয়ে একটি টিম তৈরি করা হচ্ছে। যাঁরা মূলত ওই এলাকার তথ্য সংগ্রহ করবেন। তবে তাঁদের পরিচয় গোপন রাখা হবে।
তবে শুধুমাত্র ভবানীপুরে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় খোলার জন্য শুভেন্দু অধিকারীর সিদ্ধান্তে মমতা বনাম শুভেন্দু লড়াই এর জল্পনা তৈরি হচ্ছে – তা নয়। জল্পনা শুরু হয়েছিল কয়েকদিন আগে শুভেন্দু অধিকারীর তাৎপর্যপূর্ণ এক মন্তব্যের পরেই। কয়েকদিন আগেই শুভেন্দু মন্তব্য করেছিলেন, নন্দীগ্রামের থেকে ভবানীপুরে জেতা সহজ। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল তুলে ধরে বিজেপির বক্তব্য, ভবানীপুরের ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টিতে এগিয়ে বিজেপি। ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। আর তৃণমূল এগিয়ে ছিল ৭৩, ৭৭ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে।
মুখ্যমন্ত্রী ৭৩ নম্বরের ওয়ার্ডের ভোটার। লোকসভা ভোটের নিরিখে এই ওয়ার্ডে বিজেপি পিছিয়ে মাত্র ২৭৯ ভোটে পিছিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী যে ওয়ার্ডের ভোটার, সেখানেই কার্যালয় খুলতে চান শুভেন্দু। জানা গিয়েছে, গতকালের বৈঠকে শুভেন্দু জানিয়েছেন, ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে নজর না দিলেও চলবে। ওই ওয়ার্ডটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। বিজেপির একাংশ বলছে, ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিয়ে বাকি ওয়ার্ডগুলিতে ঠিকঠাক লড়াই করলে ভবানীপুরে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও লোকসভা ভোটে দেখা গিয়েছে, তৃণমূল তিনটি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকলেও ভবানীপুর থেকে ৮ হাজার ২৭১ ভোটের লিড পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। শুধু ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডেই তৃণমূল বিজেপির চেয়ে ১২ হাজার ৩২৫ ভোট বেশি পেয়েছিল।