প্রিয়াঙ্কা মান্না। কলকাতা সারাদিন।
অনেক দিন ধরে শারীরিক সম্পর্ক বা লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা কোনো নারী তাঁর সঙ্গীর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতির ভুয়ো আশ্বাসে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনতে পারবেন না- এমনই ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতা সমন্বিত বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, “দীর্ঘদিনের লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতারণার মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের দাবি দুর্বল হয়ে পড়ে।”
এই মামলায় এক কলেজ লেকচারার অভিযোগ করেন, তিনি গত ১৬ বছর ধরে এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন এবং তাঁর প্রেমিক বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে প্রতারিত করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।
তবে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “এত দীর্ঘ সময় ধরে একসঙ্গে থাকার পর অভিযোগকারী যদি বিয়ের প্রতিশ্রুতির নামে প্রতারণার অভিযোগ তোলেন, তাহলে তা বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।” ফলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলা বাতিল করে দেওয়া হয়।
আদালতের মতে-
“১৬ বছর ধরে সম্পর্ক বজায় ছিল, যার মধ্যে কোনো জোরজবরদস্তি বা প্রতারণার প্রমাণ নেই।”
“দীর্ঘ সময় ধরে স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক বজায় রাখার পর বিয়ের প্রতিশ্রুতির নামে প্রতারণার অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়।”
“যৌন সম্পর্ক কেবলমাত্র বিয়ের আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এত বছর ধরে টিকে থাকতে পারে না।”
এছাড়া কোর্ট জানায়, অভিযোগকারিণী একজন শিক্ষিত মহিলা, যিনি সম্পর্কে স্বেচ্ছায় জড়িয়েছিলেন এবং একাধিক শহরে থেকেও তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর সমাজের বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, “এই রায় লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, সম্পর্কের সমাপ্তির পর প্রতিহিংসাবশত কেউ ধর্ষণের অভিযোগ আনতে পারবেন না।”
তবে নারীবাদী সংগঠনগুলোর দাবি, “এই রায় ভবিষ্যতে প্রতারিত নারীদের ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।” তাদের মতে, “অনেক নারী প্রতারণার শিকার হন, কিন্তু এতদিন পর অভিযোগ করলে তা গ্রহণযোগ্যতা হারাবে- এই ব্যাখ্যা যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে দুর্বল করতে পারে।”
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ভবিষ্যতে লিভ-ইন সম্পর্ক সংক্রান্ত মামলাগুলোর ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিশেষত, যেখানে সম্পর্ক স্বেচ্ছায় দীর্ঘদিন ধরে বজায় থাকে, সেখানে বিচ্ছেদের পর বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অভিযোগে ধর্ষণের মামলা টিকবে না- এই বার্তা স্পষ্ট করল সর্বোচ্চ আদালত।