শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
বাংলায় মমতার সরকারের পতন চেয়ে দলীয় দফতর থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত পাশাপাশি হাঁটলেন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার এবং দিলীপ ঘোষ। ওয়াকফ আইন নিয়ে উত্তেজনার আগুন! ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে যে আন্দোলন মুর্শিদাবাদে চলছিল তা বিগত কয়েকদিনের মধ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে পরিণত হয়। যার জেরে হতাহত হয়েছেন অনেকে। আক্রান্ত হয়েছে পুলিশও।
এই অবস্থায় মান অভিমানের পালা কাটিয়ে একই মঞ্চে দেখা গেল বঙ্গ বিজেপির তিনমূর্তি দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারকে। তার মধ্যে বঙ্গ বিজেপির তিন প্রধান নেতার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথে নামায় উচ্ছ্বসিত বিজেপি নেতা কর্মীরা। রবিবার বাংলার জ্বলন্ত দুই ইস্যুকে হাতিয়ার করে কোমর বেঁধে রাস্তায় নেমে পড়েছেন বঙ্গ বিজেপির তিন বড় নেতা।
কলেজ স্কোয়ারে সভা করে রানি রাসমণি পর্যন্ত মিছিল হয়। এই তিন নেতা ছাড়াও মিছিলে ছিলেন রাহুল সিনহা, অগ্নিমিত্রা পাল, কৌস্তভ বাগচি, রুদ্রনীল ঘোষ. তাপস রায় সহ একাধিক নেতা।
কলেজ স্কোয়ারে প্রথম বক্তব্য রাখেন দিলীপ ঘোষ। মুর্শিদাবাদের সুতির ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “বাংলায় একদিকে চাকরিহারাদের হাহাকার, অন্যদিকে গৃহহারাদের হাহাকার। এই দুঃসময়ে আজ আমরা পথে নেমেছি। সবথেকে কঠিন সময়ে। বাংলার গৃহহারা হিন্দুদের পাশে আমরা। যোগ্যরা যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তার জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদেরকে আমরা ছেড়ে দেব না। অযোগ্যদের টাকা কে খেল? কেন নাটক করা হচ্ছে? তৃণমূল নেতারা, যাঁরা কাটমানি খেয়ে শিক্ষকদের রাস্তায় বসিয়েছেন, সবাই আজ রাস্তার ধারে। যোগ্যরা কথা বলার জন্য সকলে পাসও পেলেন না। যাঁরা অনুগামী তাঁরা ভিতরে ঢুকে গেলেন, হাততালি দিলেন। এই সরকারের দিন ঘনিয়ে এসেছে। এই সরকারের পতন চাই।”
এরপরই বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “এই সরকারে আর এক দিনও থাকার অধিকার নেই।” মুর্শিদাবাদের অশান্তি প্রসঙ্গে শুভেন্দুর বিস্ফোরক দাবি, “মুর্শিদাবাদে পুলিশ দাঁড় করিয়ে রেখে তাণ্ডব চালানো হচ্ছে।” এরপর বক্তব্য রাখতে ওঠেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি মুর্শিদাবাদ-চাকিরহারাদের ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে বিঁধে সুর চড়ান।
এর মাঝেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে দাবি করেন, “অশান্তির জেরে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে ৪০০ জনেরও বেশি হিন্দু নদী পার হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তারা সকলে মালদার বৈষ্ণবনগরে লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। তৃণমূল কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতি উগ্রপন্থীদের উৎসাহিত করেছে। হিন্দুরা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে! আইনশৃঙ্খলার এই অবনতি রাজ্য সরকারের লজ্জা। আমি জেলায় মোতায়েন কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী, রাজ্য পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের কাছে এই বাস্তুচ্যুত হিন্দুদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার এবং এই জিহাদিদের সন্ত্রাস থেকে তাদের জীবন রক্ষা করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ধুলিয়ানের হিন্দুপ্রধান গ্রামগুলিতে পানীয় জলে বিষক্রিয়া থেকে শুরু করে হিন্দুদের উপাসনালয় ধ্বংস করা, নির্বিচারে হিন্দুদের খুন, মহিলাদের সম্ভ্রম নষ্ট করা এগুলো কি আদৌ আন্দোলনের অংশ? প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।

তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলেছি, ধর্মান্ধ মৌলবাদী দানবদের এই হিংস্র তাণ্ডব কোনও নির্দিষ্ট আইনের বিরোধিতা করে নয়। পশ্চিমবঙ্গের নিরীহ বাঙালি হিন্দুদের উপর এই নারকীয় পৈশাচিকতা আদতে দীর্ঘ পরিকল্পনার ফসল! ইসলামী মৌলবাদীদের সন্ত্রাসের চূড়ান্ত বর্বরতায় একদিন যেভাবে ওপার বাংলা থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দুদের এপারে আসতে হয়েছিল উদ্বাস্তু হয়ে, আজকের মুর্শিদাবাদ তার আদর্শ প্রতিফলন। ধুলিয়ানের হিন্দুপ্রধান গ্রামগুলিতে পানীয় জলে বিষক্রিয়া থেকে শুরু করে হিন্দুদের উপাসনালয় ধ্বংস করা, নির্বিচারে হিন্দুদের খুন, মহিলাদের সম্ভ্রম নষ্ট করা এগুলো কি আদৌ আন্দোলনের অংশ? ব্যর্থ মূখ্যমন্ত্রী তাঁর স্বপ্নের ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ বানানোর বরাত যাদের কাঁধে দিয়েছেন, তার শুরুটা আসলে মুর্শিদাবাদ থেকে হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোষণের সরকারের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা এখনই জাগরিত এবং সংগঠিত না হলে আগামীদিনে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে হিন্দুদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার এই জঘন্য চক্রান্ত প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।”