রাহুল সিংহ মজুমদার। কলকাতা সারাদিন।
বরাবরের বিতর্কিত অভিনেত্রী থেকে বিজেপি সাংসদ, অনেকটা পথ পেরিয়েছেন। বর্তমানে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিনিধি তিনি। কিন্তু বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না কঙ্গনা রানাউতের। এবার ‘ইমার্জেন্সি’ ছবিটি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিনেত্রী।
দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর শাসনকাল, বিশেষ করে জরুরি অবস্থা থেকে ইন্দিরা হত্যাই ছবির মূল বিষয়বস্তু। এই ছবির প্রচারে আগাগোড়া আলটপকা মন্তব্যের জন্য খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন নায়িকা। কিন্তু এতকিছুর পর ছবির মুক্তিই আটকে গিয়েছে। ছবিটি মুক্তিতে ছাড়পত্র দেয়নি সেন্সর বোর্ড। এমনকি ছবিটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিও উঠছে।
‘ইমার্জেন্সি’ ছবিতে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭, জরুরি অবস্থার ২১ মাসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। দেখানো হয়েছে ইন্দিরা গাঁধীর হত্যাপর্বও। ১৪ অগাস্ট ছবির ট্রেলার মুক্তি পায়, যা প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ দেখেছেন। কিন্তু ‘লাইক’ দিয়েছেন মাত্র ৪৬১ জন। গোড়া থেকেই ছবিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। বিশেষ করে শিখ সম্প্রদায় থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া মেলে। তাদের ভুল ভাবে দেখানো হয়েছে ছবিতে, ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। (Emergency Release)
সেই নিয়ে দিল্লি শিখ গুরুদ্বার ম্যানেজমেন্ট কমিটির তরফে সেন্সর বোর্ডকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রককেও। ছবিটির প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়। ছবিটি মুক্তি পেলে হিংসা ছড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধ কমিটি আইনি নোটিস পাঠায় কঙ্গনাকে, ছবির প্রযোজককেও। ট্রেলার তুলে নিয়ে সর্বসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে বলে জানানো হয়। ছবিটি কোনও ভাবেই দেখানো যাবে না, সেটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের তরফে।
ট্রেলারে একটি দৃশ্যে খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাকামী নেতা জার্নেল সিংহ ভিনড্রানওয়ালেকে পৃথক দেশের দাবি করতে দেখানো হয়। ভিনড্রানওয়ালে কখনও এমন দাবি করেননি বলে দাবি শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের। ভিনড্রানওয়ালের দাদা হরজিৎ সিংহ রোডে জানিয়েছেন, কখনও খালিস্তানের সপক্ষে গলা চড়াননি ভিনড্রানওয়ালে। সরকার নিজে থেকে দিলে, তবেই গ্রহণ করবেন শিখরা।
শুধু শিখ সম্প্রদায়ই নয়, ছবির ট্রেলার দেখে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষও। অকাল তখতে বোমা বিস্ফোরণ, অপারেশন ব্লু স্টারে মানুষের মৃত্যুর বিষয়গুলি ছবিতে দেখানো হয়নি কেন, প্রশ্ন ওঠে। সেই আবহেই ছবির প্রচারে বেরিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন কঙ্গনা। কৃষক আন্দোলনে মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়েছে, খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এর ফলে ছবিটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি আরও জোরাল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পঞ্জাব থেকে ছবিটি নিয়ে আপত্তি উঠছে। হিমাচল প্রদেশ বিধানসভায় ইতিমধ্যেই কঙ্গনার ওই মন্তব্য নিয়ে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে।
গত বছরই ‘ইমার্জেন্সি’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছবির মুক্তি পিছিয়ে যায়। এ বছর জুন মাসে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের মুখে আবারও পিছিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তি পাবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু বিতর্ক এবং শিখ সম্প্রদায়ের আপত্তির জেরে আবারও দোলাচল দেখা দিয়েছে। সেন্সর বোর্ডের তরফে এখনও ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি ‘ইমার্জেন্সি’-কে। কবে মুক্তি পাবে ছবিটি, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে কঙ্গনা এবং ছবির প্রযোজক জানিয়েছেন, ইন্দিরা গাঁধীর হত্যা দেখানো নিয়ে তাঁদের উপর চাপ আসছে। পঞ্জাবের দাঙ্গা, ভিনড্রাওয়ালের ভূমিকা, দেখানো নিয়েও উঠছে আপত্তি। তাঁরা ছবিতে কী দেখাবেন, তা নিয়ে অন্যের মতামত শুনতে যাবেন কেন, প্রশ্ন তুলেছেন কঙ্গনা এবং ছবির প্রযোজক। OTT-তে যেখানে নগ্নতা, হিংস্রতা দেখানো হচ্ছে, তাঁদের ছবির উপর এত নিষেধাজ্ঞা কেন, প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ছবির নির্মাতারা। সেন্সর বোর্ড বেআইনি ভাবে ছবিটির মুক্তি আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।