সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা মাসে মাসে আর্থিক সাহায্য পাবেন রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। গ্রুপ সি’র কর্মীরা পাবেন মাসে ২৫ হাজার টাকা করে সাহায্য। গ্রুপ ডি কর্মীরা সেখানে পাবেন ২০ হাজার টাকা সাহায্য। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে 2016 সালের এসএসসি প্যানেলের চাকরি পাওয়া গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য এমন ঐতিহাসিক ঘোষনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখে গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট বাংলার ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মচারীর চাকরি বাতিলের নির্দেশে শীল মোহর দিলেও পরে রাজ্য সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি করার অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু স্কুলে ফেরার বা চাকরিতে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়নি গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মচারীদের। তাই চাকরি ফেরানোর দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলনে বসে রয়েছেন তারা।
এবারে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মচারীদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন মানবিক মমতা। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজে ফোন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মচারীদের। তীব্র গরমের মধ্যে যেন যেভাবে আন্দোলনে বসে রয়েছেন রাস্তার উপরে তার জন্য এর আগেই ঝাড়গ্রামের মঞ্চ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের নিশ্চিন্তে থাকার আবেদন জানিয়েছিলেন মমতা। সেই সঙ্গে জানিয়েছিলেন তিনি কলকাতায় থাকলে এক সেকেন্ডের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারতেন। এই কথা রেখেই আজ আন্দোলনকারীদের ফোন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার চাকরিহারা গ্রুপ ‘সি’ এবং ‘ডি’ শিক্ষাকর্মীরা নবান্নে গিয়েছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে দেখা করতে। সেই সময়েই পন্থের ফোনে ফোন করে ভাতা দেওয়ার কথা জানান মমতা। শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আন্দোলনকারীদের মমতা জিজ্ঞেস করেন গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের বেতন কত, এরপর তিনি বলেন, “আমি যা বলব ওরা কি মানবে? তাহলে আমি বলব। কোর্ট চাকরি বাতিল করে দিয়েছে। মানবিকতার খাতিরে বলছি, ওরা মানলে আমি বলব।” মুখ্যমন্ত্রীকে উত্তরে দেন চাকরিহারা গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীরা। তাঁরা বলেন, “ম্যাম না শুনে কী করে হ্যাঁ বলব। আমাদের এখানে প্রতিনিধিরা আছেন। না শুনে কী করে বলব…।”
এই শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রিভিউ না হওয়া পর্যন্ত মানবিকতার স্বার্থে কিছু একটা ভাবতে পারি। আমরা গ্রুপ সি, ডি’র জন্যও রিভিউ পিটিশনে যাব। যোগ্য বা অযোগ্য এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি’র পুরো বাতিল করে দিয়েছে। আমি এডুকেশন বিভাগকে এর মধ্যে রাখব না। তবে কথা দিচ্ছি, সকলের জন্য রিভিউ পিটিশনে যাব। আইনের কাগজপত্রের জন্য অপেক্ষা করছি। কারণ শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। রিভিউ করতে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে পারে। চাকরি যাতে সবার বজায় থাকে নিশ্চয় চাই।”
এরপরই মমতা বলেন, “আপাতত মানবিকতার দিক থেকে ভেবে মুখ্যসচিব, শ্রম দফতর, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে একটা কথা ভেবেছি। ডানলপের কর্মীদের ১০ হাজার টাকা দিই। সেই রকমই ‘সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে’ গ্রুপ সি দের ২৫ হাজার, গ্রুপ ডি-দের ২০ হাজার করে দেব। যদি তাতে ওঁরা রাজি থাকেন। যতক্ষণ না ফয়সালা হচ্ছে। কোর্ট অ্যালাউ না করলে বিকল্প কী হতে পারে ভাবব।”
চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মচারীদের সমস্যার সমাধান করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ আর্থিকভাবে পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে নিহতদের পরিবার, সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগাঁওতে নিহত বাঙালি পর্যটকদের পরিবার পরিজন এবং নদীয়ার তেহট্টের শহীদ সেনা জওয়ান এর পরিবারের জন্যও। উধমপুরে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারানো তেহট্টের জওয়ান ঝন্টু শেখের স্ত্রীকে চাকরি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা। শনিবার এই ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিহত জওয়ানের স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন বলে এদিন জানালেন মমতা। সেই সঙ্গে নদিয়ার তেহট্টের নিহত সেনাকর্মীর পরিবারের একজনকেও চাকরির প্রতিশ্রুতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এছাড়াও এদিন পহেলগাঁওয়ে নিহত বাংলার পর্যটকদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিহত তিন বাঙালি পর্যটকের পরিবারকেই এককালীন ১০ লক্ষ টাকা করে সাহায্য দেওয়া হবে রাজ্যের তরফে। নিহত কলকাতার বিতান অধিকারীর মা-বাবার আর্থিক পরিস্থিতি ভালো নয়। বিতানের বাবার জন্য মাসে ১০ হাজার টাকা করে পেনশন ফান্ডের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিতানের মায়ের নামে হবে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এছাড়াও বেহালা এবং পুরুলিয়ায় নিহত বাঙালি পর্যটকের পরিবারের কেউ চাকরি চাইলে তারও ব্যবস্থা করে দেবে রাজ্য সরকার। তেহট্টের নিহত সেনাকর্মীর পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।