শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ায় দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া থেকে শুরু করে এবারের রথযাত্রার ঘিরে বিপুল উৎসাহ দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী শুক্রবার রথযাত্রা হলেও বুধবারেই কলকাতা থেকে দীঘার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মমতা। আর খোদ মুখ মন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের শুধুমাত্র একটি রথযাত্রা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই বিপুল উৎসব নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ করলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিনেই দীঘায় গিয়ে জগন্নাথ দর্শন করার পাশাপাশি মমতার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ একান্ত বৈঠকের পরে রাজ্য বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন দিলীপ। তা সত্ত্বেও আজ দিলীপ ঘোষ বলেন, দিঘার রথযাত্রা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার কার্যত বাড়াবাড়ি করছে বলে মনে করছেন দিলীপ ঘোষ।
তাঁর সাফ কথা, ”দেখে মনে হচ্ছে এর আগে কেউ রথযাত্রা দেখেনি। আর কোথাও যেন রথযাত্রা হয়নি। ৬০০ বছর ধরে দেশে রথযাত্রা হয়ে আসছে। কিন্তু সরকারি টাকায় এই ধরনের উৎসব, কার্নিভাল ছাড়া আগে হয়নি। ওঁর মনে হচ্ছে এটা করে ভোট পেয়ে যাবেন। কিন্তু আমার খুব সন্দেহ আছে।”
পুরীর জগন্নাথ ধাম এবং দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের মধ্যে কোন মন্দির আসল তা নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “জগন্নাথ দেব তার নিজের জায়গায় আছেন। মন্দির হচ্ছে ভালো কথা। বাকি সমস্ত কাজ ফেলে দিয়ে শুধু জগন্নাথ রথ যাত্রা হবে এটা কেন? আপনাদের কাছে আর কোনও ইস্যু নেই? মানুষের আর কোনও সমস্যা নেই? এটা খুব বড় ভুল করছেন।”
দিলীপের মতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্যই হচ্ছে ভোট। দিলীপ ঘোষ বলেন, ”পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্য কোনও কাজ নেই। না উন্নয়ন করার, না কোনও সমস্যা সমাধানের ইচ্ছে রয়েছে। চাকরিহারারা রাস্তায় বসে আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই। আগামী বছর স্কুলগুলি উঠে যাবে কিনা তা কেউ জানে না। তবে ২৬-এর ভোটকে মাথায় রেখে এই উৎসব করা হচ্ছে। পুরো প্রশাসনকে এটার পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে কালীগঞ্জের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি নেতার খোঁচা, প্রশাসন সব জায়গায় চুরমার হয়ে গেছে। পুলিশ-প্রশাসনের কোথাও উপস্থিতি দেখা যায় না। কালীগঞ্জের ঘটনায় প্রমাণিত পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্থ। বাংলা দুর্বৃত্তদের হাতে। দিলীপের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে ললিপপ দেখিয়ে ভোটে জেতার চেষ্টা করছেন।

কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে তৃণমূল জেতার পর বিজয়যাত্রা বেরিয়েছিল। অভিযোগ, সেখান থেকেই বোমা মারা হয়। তাতে এক নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় গোটা রাজ্য তোলপাড়। ইতিমধ্যে পুলিশ একাধিক গ্রেফতারি করলেও শাসক দলের প্রতি বিরোধীদের আক্রমণ বহাল রয়েছে। এই নিয়েই দিলীপের মন্তব্য, দিনের আলোয় এইভাবে বোমা নিয়ে কেউ বিজয় উৎসব করে কোনও দিন দেখেননি তিনি। তবে তাঁর ধারণা, আরজি করের ঘটনা থেকে বগটুইয়ের ঘটনা যেমন চাপা পড়ে গেছে, এটাও তাই হবে।
কালীগঞ্জ কাণ্ড নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এইভাবে বোমা নিয়ে কেউ বিজয় উৎসব করে কোনোদিন দেখিনি। যে মুসলমানরা বারবার তৃণমূলকে বাঁচায় সেই মুসলমান একটি শিশুকে মরতে হল। আর জি কর, বগটুই যেমন চাপা পড়ে গিয়েছে, এটাও তাইই হবে। ওই গরীব পরিবার হাহাকার করবে।”