সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্যালাইনকাণ্ডে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন নাসরিন খাতুন। রবিবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। গত ১২ জানুয়ারি থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন নাসরিন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সন্তান জন্মের পর স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল যা তাঁর শরীরের জন্য ক্ষতিকর ছিল।
এর ফলস্বরূপ, নাসরিনের শরীরে রক্ত চলাচল এবং কিডনি সমস্যা দেখা দেয়। ভেন্টিলেটরে রেখে চিকিৎসা চললেও শেষ পর্যন্ত শরীর খারাপ হতে শুরু করে ৯ মে রাত থেকে। তুলনামূলকভাবে কম অসুস্থ রেখা সাউ নামে এক প্রসূতি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাকি তিন জন মাম্পি সিংহ, মিনারা বিবি ও নাসরিন খাতুনকে ১২ জানুয়ারি এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয়। মাম্পি, মিনারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে কেশপুরের নাসরিনের আর ঘরে ফেরা হলো না। ছুঁয়ে দেখা হলো না কোলের সন্তানকে।
নাসরিনের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার গভীর শোকের মধ্যে রয়েছে। ৪ মাসের এই কঠিন সময়ে নাসরিনের একমাত্র আশা ছিল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে তাঁর সন্তানকে কোলে নেওয়ার, কিন্তু সে আশা আর পূর্ণ হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রবিবার রাতে ডায়ালিসিস চলাকালীন মাল্টি-অর্গান ফেলিওরের কারণে নাসরিনের মৃত্যু হয়। ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহ পরিবারকে হস্তান্তর করা হবে।
নাসরিনের মৃত্যুর খবরে শোকাহত তাঁর পরিবার। নাসরিনের জামাইবাবু ইনসান আলি সোমবার সকালে বলেন, ‘দিন দশেক আগেই জেনারেল বেডে দিয়েছিলেন। ১০ মে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ৯ মে রাত থেকে ফের খিঁচুনি ও বমি শুরু হয়। ১১ মে, রবিবার রাতে চিকিৎসকরা জানান, ও আর নেই।’

এদিন স্ত্রীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্বামী সেলিম খান। ‘আমার সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে কী ভাবে মানুষ করব?’ প্রশ্ন সেলিমের।
নাসরিনের পরিবার-পরিজনেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসায় গাফিলতি সহ জাল স্যালাইন কাণ্ডের ফলেই তার মৃত্যু ঘটেছে। অথচ যে সমস্ত চিকিৎসকদেরকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল তারা আবার কাজ করছেন। কেন তাদেরকে কাজে ফেরালো সরকারকে প্রশ্ন করেছেন মৃত নাসরিনের পরিবার।
পাশাপাশি নাসরিনের কাছে থাকা তার শ্বশুর অসুস্থ হয়ে গেলেও চিকিৎসা করাতে গেলে মেদিনীপুর হাসপাতালে অভব্য ব্যবহারেরও অভিযোগ তুলেছেন পরিবার। ছোট্ট বাচ্চাটির ভবিষ্যতের দায়িত্ব নেওয়ার কথা সরকারকে আর্জি জানিয়েছে পরিবারটি।