বিতস্তা সেন। কলকাতা সারাদিন।
খোদ কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে উঠল একসঙ্গে দু’টি ভোটার কার্ড রাখার অভিযোগ! যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে, তিনি কোয়েল মজুমদার ওরফে কোয়েল চৌধুরী। বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা মোদী সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের স্ত্রী। অভিযোগ হল, কোয়েল একইসঙ্গে জলপাইগুড়ি এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ভোটার। জলপাইগুড়িতে তাঁর পরিচয় হল – কোয়েল চৌধুরী এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে তাঁর পরিচয় হল – কোয়েল মজুমদার। দু’টি জায়গায় দুই ভোটার কার্ডের এপিক নম্বরও আলাদা। ফলত, যদি সংশ্লিষ্ট দুই কেন্দ্রে দু’টি ভিন্ন দিনে ভোটগ্রহণ করা হয়, তাহলে হিসাব মতো কোয়েল দুই জায়গাতেই ভোটদান করতে পারবেন!
উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগ তুলে প্রশাসনিক বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, একজনের জায়গায় তিনজনের নাম রয়েছে ভোটার লিস্টে। সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ভোটার তালিকা সংক্রান্ত নতুন এক বিতর্কে নাম জড়াল রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের। অভিযোগ, তাঁর স্ত্রী কোয়েল মজুমদারের নাম দু’টি ভিন্ন এলাকার ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত রয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, সুকান্তর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে পর্যন্ত জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ছিলেন কোয়েল। বিয়ের আগে তাঁর পদবী ছিল চৌধুরী। তাই কোয়েল চৌধুরী নামে জলপাইগুড়িতে ভোটার কার্ড ছিল। কিন্তু, বিয়ের পর তাঁর পদবী বদলে হয় মজুমদার এবং তিনি দক্ষিণ দিনাজপুরে থাকতে শুরু করেন। সেই সময়েই নতুন করে ভোটার কার্ড তৈরি করান তিনি। সেই কার্ড হয় কোয়েল মজুমদার নামে।
সুকান্ত মজুমদারের ব্যাখ্যা ও পাল্টা আক্রমণ
এই প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী কোয়েল চৌধুরী ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই জলপাইগুড়ি থেকে বালুরঘাটে তাঁর ভোটার কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করেছিলেন। অভিযোগ, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ভোটার কার্ড স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও, জলপাইগুড়ির ভোটার তালিকা থেকে কোয়েল চৌধুরীর নাম বাদ যায়নি। প্রায় সপ্তাহখানেক আগে বিষয়টি নজরে আসার পরেই সুকান্ত মজুমদারের স্ত্রী কোয়েল নিজে জলপাইগুড়ির ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাতিলের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই বিতর্কের দায় নিতে একেবারেই নারাজ। তাঁর দাবি, তাঁর স্ত্রী ইতিমধ্যেই একটি জায়গার ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তারপরেও কেন নাম বাদ যায়নি, সেই দায় সম্পূর্ণ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের। এই বিষয়ে তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেও আঙুল তুলেছেন।
সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আমার স্ত্রী এক সময় জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ছিলেন। তারপর ভোটার কার্ড চেঞ্জ করিয়েছেন। এখানে এসে ভোটার হয়েছেন। এটা একটা নন ইস্যু। ইস্যু করার চেষ্টা। তাই আমি আগেই বিডিও-কে জানিয়েছি যাতে জলপাইগুড়ির নামটা কাটানো হয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “আর ভোটার কার্ড তৈরির কাজ কে কে করেন? জেলা প্রশাসন করেন। কারও নাম দু’জায়গায় থাকলে তার জন্য দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে ডিএম-রা কাজ করেন। আমার নির্দেশে তো করেন না।”