শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“বাংলাদেশীদের জন্য দুটো ভাগ আছে। প্রথমত, যারা ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে এসেছেন তারা শরণার্থী। আর একদল হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমান। তারা আমাদের রেশন, আমাদের জমি, আমাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।” এভাবেই আজ রাজ্য নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি জমা দিয়ে বাংলায় বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণের বিষয়ে জোর দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর দেশ জুড়ে পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণ ও বহিষ্কারের কাজ চলছে। মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণের কাজ জোরর কদমে চলছে। কিন্তু ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা এমন বহু হিন্দু রয়েছেন এদেশে। সঙ্গত কারণেই বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে যে তাদেরকেও কি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে? আজ সোমবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এর উত্তর দেন।
বাংলায় শাসকদল তৃণমূলের মদতে একশ্রেণীর অসাধু সরকারি আধিকারিক ভোটার তালিকায় গরমিল করার পাশাপাশি বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীদের অনৈতিকভাবে ভোটার তালিকায় ঢুকানোর চেষ্টা করছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন তিনি। আজ দুপুরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সাথে দেখা করেন শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল। সেই সাক্ষাৎ শেষে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভবনে বিরোধী দলনেতা শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারী কারা তা চিহ্নিত করে বলেন, “বাংলাদেশীদের জন্য দুটো ভাগ আছে। প্রথমত, যারা ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে এসেছেন তারা শরণার্থী। আর একদল হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমান। তারা আমাদের রেশন, আমাদের জমি, আমাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এরা লাভ জিহাদ, ভোট জিহাদ, ল্যান্ড জিহাদ করে। এদের সিপিএম নিরাপত্তা দিত,তবে তখন তারা ছোট আকারে ছিল। এখন তারা বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে, মমতা ব্যানার্জির দয়ায় এক কোটির কাছাকাছি হয়ে গেছে। তারা একদম চিহ্নিত ভোটার। তারা কোথায় ভোট দেবে সবাই জানে। তাদের বাড়ি প্রতি এক কোটি টাকার করে দিল তারা জানে তাদের খালা কে, তাদের আপা কে, তাদের বুবু কে। অতএব তারা সেখানেই ভোট দেবে।”
তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে কাকদ্বীপে এসে বসবাসকারী অরূণ গড়াই রবিবার অভিযোগ করেছিলেন যে ভোটার লিস্টে নাম তুলতে তিনি মাথা পিছু সদস্যের জন্য শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে দশ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। তারপরই নাম উঠে গিয়েছে। তবে শুধু অরূণ গড়াই নয়, খোদ কাকদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরাও অভিযোগ করে যে এই বেআইনি কাজে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জড়িত। তার অভিযোগ, কাকদ্বীপ এসিডও, বিডিও অফিসের কর্মীরা লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই বেআইনী কাজ করে গিয়েছেন। এর পিছনে রয়েছে বড়সড় চক্র। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এরা এখানে আসে। আর কিছু দালাল চক্র আর কাকদ্বীপের এসডিও, বিডিও অফিসের লোকজন এই অনিয়ম করেছেন। তাদের প্রশাসন খুঁজে বের করুক। এখানে লক্ষ লক্ষ টাকার গল্প। অর্থের বিনিময়ে এই কার্ড বানিয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে আজ শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “অরুণ গড়াইয়ের সাহস আছে। তিনি হাইকোর্টে গেছেন মধুসূদন মন্ডলদের কীর্তি ফাঁস করার জন্য। আই প্যাকের প্রতীক জৈনরা প্রত্যেকটা এসডিও,বিডিও এবং ডিএম অফিসে কি করছে বলার জন্য। আমরা সিবিআই তদন্ত চাই। আমরা ইলেকশন কমিশনারকে বলেছি আপনাকে আদালতে যাওয়ার দরকার নেই, আপনার সাংবিধানিক ক্ষমতা আছে কিন্তু আপনি প্রয়োগ করছেন না। উনি বলছেন আমাকে এসডিআই এর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।”
পাশাপাশি ২০২৬ সালের ভোটের আগে রাজ্য পুলিশের বর্তমান ওসি, আইসি, এসপি,এসডিপিও, ডিজিপি, এডিপিদের বদলি করিয়ে ভিন রাজ্য থেকে পুলিশ আধিকারিকদের এনে ভোট করার আবেদন জানান বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, “আমরা বলেছি ২০২৬ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ডিসেম্বর থেকে পুলিশের বদলি শুরু হবে। সেই বদলি গতানুগতিকভাবে করলে হবে না।”

মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানের সাম্প্রদায়িক হিংসায় কলকাতা হাইকোর্টের সিটের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমরা বলেছি নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের আগের দিন ৪৮ ঘন্টা কোন ওসি, আইসি, এসপি,এসডিপিও, ডিজিপি, এডিপি বিরোধীদের ফোন ধরে না। আজকের সেটা প্রমাণ হয়েছে হাইকোর্টের সিট-এর রিপোর্টে।” তাই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে তিনি বিধানসভার নির্বাচনের আগে রাজ্য পুলিশের ব্যাপক বদলির কথা জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।