শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“সামশেরগঞ্জের মতো মহেশতলাতেও ক্ষতিগ্রস্তরা পুলিশ বা শাসক দলের তরফে কোনও ক্ষতিপূরণ নেবেন না বলেও জানিয়েছেন।” কিছুদিন আগে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ এর ঘটনার উদাহরণ টেনে দক্ষিণ 24 পরগনার মহেশতলা নিয়েও এমন চঞ্চল্যকর দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সামশেরগঞ্জেও অশান্তি ও হিংসার ঘটনার পরে সেখানে ছুটে গিয়ে যেমন ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে থেকে কিছু পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ঠিক তেমনভাবেই আজ মহেশতলা অশান্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন তিনি। ২৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে এদিন সাহায্য তুলে দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মহেশতলা অশান্তির ঘটনায় ৪৮ ঘন্টা কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে থেকে কোনও ধরনের আর্থিক সাহায্য বা নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী শাসক তৃণমূলকে নিশানা করে অভিযোগ করেছেন, অশান্তির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সকলেই হিন্দু। মোট ২৬ জন ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে ২৩ জন এদিন হাজির ছিলেন। তাদের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ সাহায্য তুলে দেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু আরও বলেন, “সামশেরগঞ্জের মত মহেশতলাতেও ক্ষতিগ্রস্তরা পুলিশ বা শাসক দলের তরফে কোনও ক্ষতিপূরণ নেবেন না বলেও জানিয়েছেন।” ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এই অবস্থায় আদালতের হস্তক্ষেপের দাবি উঠেছে। এদিন বিরোধী দলনেতা জানিয়েছেন, সোমবার অথবা মঙ্গলবারের মধ্যে আদালত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, আশাকরি আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা মহেশতলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে পারব।” মহেশতলা কাণ্ডে এন আই এ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
মহেশতলা কাণ্ডের জেরে এবার পুলিশে ব্যাপক রদবদল। সরিয়ে দেওয়া হল রবীন্দ্রনাথনগর থানার আইসিকে। মহেশতলার এসডিপিও-কেও বদলি করা হয়েছে। যদিও এটিকে রুটিন বদলি বলেই দাবি করা হয়েছে। তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, মহেশতলার সংঘর্ষের জেরেই পুলিশে এই বদলি নবান্নের। জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রনগর থানার আইসি মুকুল মিঞাকে দার্জিলিংয়ের ইন্সপেক্টর অফ পুলিশ করে পাঠানো হয়েছে। তাঁর জায়গায় রবীন্দ্রনগর থানার আইসি-র দায়িত্ব নিচ্ছেন মালদহের রতুয়ার সার্কেল ইন্সপেক্টর সুজন কুমার রায়। বদলি করা হয়েছে মহেশতলার এসডিপিও-কেও। মহেশতলার এসডিপিও কামরুজ্জামান মোল্লাকে এসিপি থার্ড ব্যাটেলিয়নে বদলি করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় মহেশতলার এসডিপিও হয়ে আসছেন সৈয়দ রেজাউল কবির।
তবে পুলিশের এই রদবদলের ঘটনা নেহাত ছেলে ভুলানো পদক্ষেপ বলে দাবি করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “পুলিশ তৃণমূল আর জিহাদী এক হয়ে গেছে। আমি মুকুল মিঁয়ার গ্রেপ্তার গ্রেফতার চাই। ঠ্যালায় পড়ে বদলি করেছে। এই তো আসল কারিগর। এই তো আসল মূলাধার। ওই রিপোর্টিং অথরিটি এসডিপিও বা এসপি ছিল না। ওই রিপোর্টিং অথরিটি ছিল ভাইপোর পিএ। মুকুল মিঁয়াকে সরাসরি পরিচালিত করা হত ক্যামাক স্ট্রিটের ভাইপোর অফিস থেকে। এটাই তো অরিজিনাল ডাইভার মডেল। এই মডেলেই তো ৭ লক্ষ ১৫ হাজার ভোট লুট করে জেতা। আমাদের প্রার্থী হাইকোর্টে লড়ছে, ওখানে ভাইপোর সঙ্গে দেখা হবে।” এর পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “এখানে এত ভয়ের পরিবেশ আছে যে আক্রান্তদের ছবি দেখাতে গিয়ে তো আমাদের ভাবতে হচ্ছে। মেটিয়াবুরুজ এলাকায় মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হিন্দু রয়েছে। রবীন্দ্র নগর এলাকায় যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে সেখানে এত বেশি মুসলিম জনবসতি রয়েছে যাতে তাদের ছবি এবং নাম প্রকাশ করলে তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। রবীন্দ্র নগরে এমন ভয়ের পরিবেশ যে এখানে একজন আসা এক আক্রান্তকে একটি ফোনে ধমক খেয়ে এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তার মানে বুঝতে পারছেন ফিরহাদ হাকিম যে কথা বলেছিল, কিছুদিন আগে ডন পত্রিকার সাংবাদিকের সামনে, “ইহ্যাঁ ভি এক মিনি পাকিস্তান হ্যায়”, এটা প্রমাণিত হচ্ছে। এখানে হিন্দু জনসংখ্যা কম সেখানে রাজ্য পুলিশ এবং মমতা ব্যানার্জির প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।”

প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার রবীন্দ্রনগরের আকড়া সন্তোষপুর এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। একটি দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে গেলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে ইট-বৃষ্টি। ইটের গায়ে মাথা ফেটেছে একাধিক পুলিশকর্মীর। জখমও হয়েছেন অনেকে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একের পর এক বাইক, পুলিশের গাড়িতেও বেপরোয়া ভাবে চলেছে ভাঙচুর।