শৌভিক তালুকদার। কলকাতা সারাদিন।
২১ জুন ২০২৫ এর রাতে বিশ্ব আবারও মার্কিন সামরিক শক্তির এক ভয়ংকর নমুনা দেখল। আমেরিকা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় একের পর এক অত্যন্ত নির্ভুল এবং বিধ্বংসী হামলা চালায়। এই হামলাটি ছিল ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে আমেরিকার প্রকাশ্যে সামরিক অংশগ্রহণের ঘোষণা।
এই হামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল আমেরিকার অত্যাধুনিক ‘B-2 স্পিরিট স্টেলথ বোমারু’ বিমানের ব্যবহার, যা রাডার ফাঁকি দিয়ে শত্রুর গভীরে ঢুকে ধ্বংসাত্মক হামলা চালাতে সক্ষম।
এবার আমেরিকার মিসৌরির হোয়াইটম্যান বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে ডানা মেলল বিধ্বংসী বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান। রণকৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গুয়াম ঘাঁটিতে পৌঁছেছে বিমানগুলি। একইসঙ্গে রয়েছে চারটি বোয়িং কেসি-৪৬ পেগাসাস রিফুয়েলিং এয়ারক্র্যাফ্ট।
এরপরই ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে আমেরিকার যোগদানের সম্ভাবনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। আমেরিকা যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিলে পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনার পারদ আরও চড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিমান ১৫ টন ওজনের দু’টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা বহন করে নিয়ে যেতে পারে। এহেন স্টিল্থ বিমান শুধু আমেরিকার হাতেই রয়েছে। আমেরিকার সবচেয়ে মূল্যবান এই বি-২ যুদ্ধবিমান যেকোনও এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা পেরিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। প্রতিটি বিমানের দাম ২১০ কোটি ডলার।
এই বিমানগুলো পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে প্রমাণ করেছে যে, আমেরিকা আজও শত্রু দেশের গভীরে প্রবেশ করে ব্যাপক হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে, এবং সেটা রাডারে ধরা না পড়েই। স্নায়ুযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া এই ‘ফ্লাইং উইং’ ডিজাইনের বিমানটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান, যার একটি ইউনিটের নির্মাণ খরচ প্রায় ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর রাডার-শোষণকারী আবরণ এবং নীরব অপারেশন এটিকে প্রায় অদৃশ্য করে তোলে, যা ২১ শতকের যুদ্ধে এটিকে একটি ‘গেমচেঞ্জার’ করে তুলেছে।
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি মার্কিন ‘বাঙ্কার বাস্টার’ গুঁড়িয়ে দেবে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র? কারণ ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে— এই অভিযোগে ইজরায়েল হামলা চালিয়েছে ইরানে। কিন্তু ইরানের ফোরদো পরমাণু কেন্দ্রের অতি সুরক্ষিত ব্যূহ ভাঙতে পারেনি ইজরায়েল। পাহাড়ের ভিতরে ৩০০ ফুট আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছে ওই পরমাণু কেন্দ্র। তার উপরে রয়েছে কংক্রিটের একাধিক সুরক্ষা চাদর।
কাজেই ওই দুর্গ ভাঙতে জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) প্রয়োজন। ওই ধরনের বিস্ফোরক ও তা বহনকারী বিমান ইজরায়েলের কাছে নেই। তাই নেতানিয়াহু চাইছেন আমেরিকার সাহায্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিন দুই আগেই দু’সপ্তাহের সময় চেয়েছিলেন। ট্রাম্প নিজেই বলেছিলেন, তিনি কী করবেন, তা কেউই বলতে পারবে না। এহেন পরিস্থিতিতেই গুয়ামে মার্কিন বাহিনীর শক্তিশালী বিমান পৌঁছে যাওয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও ঘোরলো করবে বলে মনে করা হচ্ছে।