Nabanna on Junior doctors : শর্ত মেনে খোলা মনে আলোচনা সম্ভব নয়, জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি খারিজ করল নবান্ন
সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
পূর্ব নির্ধারিত কোনও শর্ত মেনে খোলা মনে আলোচনা করা সম্ভব নয়। এই যুক্তিতে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করবে না রাজ্য সরকার। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পাঠানো ই মেলের জবাবে এমনই কড়া বার্তা দিয়ে দিল নবান্ন। বুধবার বিকেলেই চারটি শর্ত দিয়ে আলোচনায় বসতে চেয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ই মেল পাঠানো হয় জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে।
তার জবাবে এ দিন সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানিয়ে দিলেন, পূর্ব নির্ধারিত কোনও শর্ত মেনে আলোচনায় বসতে রাজি নয় রাজ্য সরকার। বরং রাজ্য চায় জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে সমস্যার নিরসন করতে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য জানিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের তোলা চার দফা শর্ত কার্যত খারিজ করে দেওয়া হল। ফলে জটিলতা কাটার বদলে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মধ্যে চলতে থাকা স্নায়ুর লড়াই আরও জটিল হল বলেই মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করেছিলাম যাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে ফিরে এসে পরিষেবা দিতে শুরু করুন। আমরা গঠনমূলক এবং খোলামেলা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। নিরাপত্তা নিয়ে চিকিৎসকদের যে মূল দাবি ছিল, তার জন্য আমরা কী করেছি তা ওনাদের জানাতাম। ওনাদের পরামর্শও আমরা শুনতাম। কিন্তু আমরা ওনাদের থেকে ইতিবাচক উত্তর পাইনি। যে ই মেল পাঠানো হয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে, তাতে চারটি শর্ত, পাঁচ দফা দাবির কথা বলা হয়েছে। কোনও শর্ত রেখে আলোচনা করা যায় না। পারস্পরিক মত বিনিময় করতে চেয়েছিলাম আমরা। যাতে সমস্যাগুলি দূর করা যায়। কিন্তু চিকিৎসকদের থেকে সাড়া না মেলায় আজকেও আলোচনা করা গেল না।’
মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এ দিন বার বারই বলেছেন, রাজ্য সরকার চিকিৎসকদের কাজে ফেরা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিতে চায়। আলোচনার জন্য রাজ্য সরকার আদৌ আর জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ করবে কি না, সেই প্রশ্নেরও সরাসরি কোনও জবাব দেননি মন্ত্রী বা পুলিশ প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্তা।
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, ‘কিছু দাবি মানলেই আলোচনা হবে, এ ভাবে কথা এগোতে পারে না। আমরা আশা করব সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে, আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে চিকিৎসকরা কাজে ফিরবেন।’
মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার বলেন, “জুনিয়র ডাক্তার ভাইবোনদের বলছি, আপনাদের কাজের জায়গা নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। খুব দ্রুত একটা বদল দেখতে পাবেন। আপনারা যখন স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি চাইছেন, তাহলে খোলা মন নিয়ে আলোচনায় আসুন। ভুল পথে যাবেন না।”
যে চার শর্তের কথা জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বৈঠকে অন্তত ৩০ জন প্রতিনিধিকে অংশ নিতে দেওয়ার দাবি। দ্বিতীয়ত, বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয় শর্তে বলা হয়েছে, আরজি কর কাণ্ডের পরে জুনিয়র চিকিৎসকদের তোলা পাঁচ দফা দাবির উপরেই আজকের আলোচনা চালাতে হবে। এবং সর্বশেষ শর্ত হিসেবে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা।
এদিন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “খোলা মনে আলোচনায় বসতে চাই। শর্তসাপেক্ষে নয়। শর্ত আর খোলা মনে আলোচনা, একসঙ্গে চলে না।” তাঁর দাবি, আসলে নির্যাতিতার বিচার চাওয়া হচ্ছে না, এর পিছনে রাজনীতি আছে বলেই মনে করছেন তিনি।
হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে ভয়মুক্ত পরিবেশ তৈরি করার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টেরও নির্দেশ রয়েছে। গত সোমবার সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির সময় রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে যে, রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বাড়াতে তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে। ৬ হাজারের উপর অতিরিক্ত ক্লোজড সার্কিট টিভি ক্যামেরা লাগানো হবে। মহিলা ও পুরুষদের জন্য পৃথক রেস্ট রুম তৈরি করা হবে হাসপাতালগুলিতে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। জেলা হাসপাতালগুলিতে এই কাজের বাস্তবায়নের উপর নজর রাখতে হবে জেলা শাসককে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্য সরকার যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সময় বেঁধে পালন করছে এদিন তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন ডিজি রাজীব কুমার। সম্ভবত সেই কারণেই তিনি বলেছেন, দ্রুত বদল দেখতে পাবেন। তা ছাড়া জুনিয়র ডাক্তারদের ভাইবোন বলে সম্মোধন করার মধ্যেও একটা বিশ্বাসবর্ধক পদক্ষেপ তথা কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এবং শুধু জুনিয়র ডাক্তার নয়, সরকার সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের মানুষকেও বোঝাতে চাইছে যে হাসপাতালে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বাড়াতে সরকার আন্তরিক।