সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
বাঙালি নাকি ব্যবসা বিমুখ! এমন বদনাম বাঙালির দীর্ঘকালের। অথচ অথচ প্রফুল্ল চন্দ্র বাঙালি হয়েও সেই কোন যুগে বাণিজ্যের মডেল দেখিয়ে গিয়েছিলেন বাঙ্গালীকে।
তার আগে প্রাচীনকালে চাঁদ সওদাগর অথবা বাংলার পৃথিবী বিখ্যাত বেনিয়াদের ইতিহাস তো আছেই। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম যেন বহু ক্ষেত্রেই ব্যবসা বিমুখ হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে।
তাই নতুন প্রজন্মকে ব্যবসায় উৎসাহী করতে ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আসানসোল ক্লাবে।
বৃহস্পতিবার এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত বড় শিল্পপতিরা, ছিলেন বার্নপুর ইসকো কারখানা এবং দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ডাইরেক্টর ইনচার্জ বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং থেকে শুরু করে অন্যান্য ছোট বড় বিভিন্ন কল কারখানার কর্ণধার এবং ছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানী ডক্টর স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী।
এদিন বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের এই সেমিনারে আমন্ত্রণ ক’রে নিয়ে এসে ব্যবসার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে উৎসাহী করা হয়। তার পাশাপাশি শিল্পের ক্ষেত্রে রাজ্য কিভাবে এগিয়ে চলেছে তাও উল্লেখ করেন শিল্পপতিরা।
ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে এই সেমিনারের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ওয়ে টু গো”। অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীরা শুধুমাত্র চাকরির পেছনে না দৌড়ে ব্যবসা এবং শিল্পের ক্ষেত্রে নতুন পথচলা শুরু করুন। উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবসায় উৎসাহিত করা। কিভাবে তারা ব্যবসায় নিজেদের নিয়োজিত করবে, পাশাপাশি লোন থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েও এদিন আলোচনা হয়।
রাজ্য এগিয়ে চলেছে শিল্পের হাত ধরে। বার্নপুর ইস্কো কারখানা এবং দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ডাইরেক্টর ইনচার্জ বিজেন্দ্র প্রতাপ সিং বলেন ”আগামী আর কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইস্কো কারখানার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হচ্ছে। একদিকে যেম শিল্পের ক্ষেত্রে রাজ্যে এটি একটি বড় বিনিয়োগ, শুধু তাই নয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্লাস্ট ফার্নেস তৈরি হচ্ছে ইস্কো কারখানায়। আগামী কয়েক মাসে নিজেদের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তবে এদিনের সেমিনারে অন্যতম মূল আকর্ষণ ছিল পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর গুরুত্বপূর্ণ সেশন। তার বক্তব্যে উঠে আসে প্লাস্টিক কিংবা দূষণ নিয়ে আজ যে সবাই শুধুই সমস্যার কথা বলে। কিন্তু এই সমস্যা থেকে শুধু সমাধান নয়, পাশাপাশি এসব নিয়েও বড় ধরনের ব্যবসায়িক ট্রেড হতে পারে বলে তিনি পথ দেখিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কার্বন কালেক্ট করার মাধ্যমে বিভিন্ন ট্রেডিং হতে পারে।
শুধু তাই নয় বিভিন্ন নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিসের রিসাইকেল করে নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করাতেও ব্যবসায় নতুন দিগন্ত আনতে পারে। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্য উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার থেকেও কিন্তু বায়োপ্লাস্টিক তৈরি করা যেতে পারে। আগামী দিনে বায়ো প্লাস্টিকের প্রচুর চাহিদা আসছে। যেভাবে প্লাস্টিক গোটা পৃথিবীকে দূষিত করছে তাতে আগামী দিনে বায়োপ্লাস্টিক ছাড়া পথ থাকবে না। সুতরাং বায়োপ্লাস্টিক তৈরি করা একটি নতুন ট্রেড হতে পারে।
এছাড়াও নষ্ট হওয়া ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে রিসাইকেল করে বিভিন্ন ধরনের নতুন দ্রব্য তৈরি করা যেতে পারে। এদিন তার দীর্ঘক্ষণের বিশ্লেষণে তিনি উপস্থিত সবারই নজর কেড়ে নেন।
স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আগামী দিনে বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এই ব্যবসায় আরও বেশি উৎসাহিত করা যেতে পারে। দিনের শেষে এই সেমিনার নতুন প্রজন্মদের কতটা উৎসাহিত করল তা হয়তো সময় বলবে। তবে এই দিনে সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ যে আলোচনা হয়েছে তাতে উপস্থিত প্রত্যেককে সমৃদ্ধ হয়েছেন।