সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
“কেন্দ্রের চূড়ান্ত বঞ্চনার শিকার হচ্ছে চা বলয়ের শ্রমিকেরা। চা বলয়ের শ্রমিকেরা কেন্দ্র সরকারের দ্বারা প্রতারিত। ধারাবাহিক ভাবে তৃণমূল রয়েছে শ্রমিকদের স্বার্থে কর্মসূচিতে।” এভাবেই কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে চা বাগানের শ্রমিকদের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্য সভা সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এখানে প্রায় ২৮৩ টি চা-বাগানে সাড়ে তিন লক্ষ চা শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। প্রসঙ্গত, আগামী ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ঋতব্রত উত্তরবঙ্গের সংগঠন সাজানোর কাজ শুরু করেছেন প্রায় নিঃশব্দে। আগেই ঠিক হয়েছিল ৩ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত লাগাতার সংগঠনের বুথওয়াড়ি সম্মেলন চলবে চা বলয়ে। কোন বুথে জয়, কোন বুথে হার, জয়ের পিছনে কোন কোন ফর্মুলা কাজ করেছে, হারের জন্যই বা কোন ইস্যু দায়ী, ধরে ধরে সেসবের বিশ্লেষণ হবে এই বুথ সম্মেলনগুলিতে। দুই দফায় জানুয়ারি মাসব্যাপী এই কর্মসূচি সাজানো হয়েছে। প্রথমে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির ৪৮৩টি বুথ ধরে তিন থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘লাইন মিটিং’ অর্থাৎ বুথ সম্মেলন হবে। ১৫ জানুয়ারি আলিপুরদুয়ারের পিএফ অফিস ঘেরাও হবে। তার পরদিন ঘেরাও জলপাইগুড়ি পিএফ অফিস। ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি দার্জিলিং সমতলের ৭৮টি বুথ ধরে লাইন মিটিং হবে। ২১ তারিখ শিলিগুড়ির প্রধাননগরে পিএফ অফিস ঘেরাও হবে।
যে ৪৮৩টি বুথে প্রথম সম্মেলন হবে, ২০১৯-এর লোকসভায় তার মধ্যে মাত্র ১৫টিতে তৃণমূল জিতেছিল। পরের লোকসভায় তার মধ্যে ২৪৪টিতে জয় এসেছে। মাদারিহাট বিধানসভার উপনির্বাচনে তার ফল সকলের সামনে। মাদারিহাটে ২৪টি চা বাগানে ১০০টি বুথ রয়েছে। গত লোকসভা ভোটে যার মধ্যে ১০টি বুথে বিজেপির থেকে পিছিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপির দখলে ছিল ৫৫টি বুথ। তৃণমূলের দখলে ছিল ৪৫টি। সেখানে উপনির্বাচনে ম্যাজিক দেখিয়েছে শাসক দল। ৩৬টি বুথে দখল বাড়িয়ে তৃণমূলের হাতে চলে এসেছে মোট ৮১টি বুথ। বিজেপির দখলে বাকি ১৯টি। এই ব্যবধানেই বিজেপিকে মোট ১৪ হাজার ৭৩৩ ভোটে হারিয়ে মাদারিহাটের চা বলয় দখলে নেয় তৃণমূল। তারা এই চা বলয়ে পেয়েছে ৩৫ হাজার ৩৩৮ ভোট। বাকি ২০ হাজার ৬০৫ ভোট পেয়েছে বিজেপি। ঠিক এই ফর্মুলাকেই ভিত করে এবার উত্তরের গোটা চা বলয় দখলের চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে এগোতে চাইছে চা বাগানে দলের শ্রমিক সংগঠন।
জলপাইগুড়ির রাণীনগর শিল্প তালুকে INTTUC অনুমোদিত তৃণমূল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশে যোগ দেন INTTUC রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে আইএনটিটিইউসির-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আলিপুরদুয়ার জলপাইগুড়ি জেলায় বুথ ভিত্তিক চা বলয় বৈঠক হয়েছে। দার্জিলিং নিউ একইভাবে পাহাড় ও সমতলে কর্মসূচি চলছে। পিএফ অফিস ফেরাও কর্মসূচি করবে আইএনটিটিইউসি।”
আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলায় ৮৮৩ টা বুথে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে ২৪৪ টার বেশি বুথে তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করে। ২০১৯ এ যেখানে মাত্র হাতে গোনা ১৮-১৯টি বুথে জয়লাভ এসেছিল তৃণমূলের। দার্জিলিং সমতলের ক্ষেত্রেও চা বল এ ৭২টি বুথের মধ্যে ৩৮- ৩৯ টি বুথে তৃণমূলে এগিয়েছিল। ২০২৫ সাল জুড়ে বছরভর চা বলয়ের বুথ ধরে ধরে তৃণমূল চা বাগান ইউনিয়ন কর্মসূচি চালাবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি কর্মসূচি প্রশংসা করে জানান নির্জল দে- র হাত ধরে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে চা বাগান গুলিতে। ২২ শে জানুয়ারি দার্জিলিং জেলার সমতলের পিএফ দপ্তরে অভিযান হবে। পিএফ দপ্তর ঘেরাও করবে তৃণমূল। আসন্ন ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত লাগাতার আইএনটিটিইউসি বিজেপি সরকারের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে যাবে। সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থে তাদের সংগঠিত করার কাজ করবে তৃণমূল।
কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়ে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় পিএফ অফিস ঘেরাও অভিযান করা হবে। পিএফ অফিস গুলিতে শ্রমিকদের পিএফ এর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। মালিকদের আড়াল করতে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ পিএফ দপ্তর কোনরকম নথি পেশ করছে না। স্বাভাবিকভাবে পিএফ অফিসে আমরা এই নোটিশ দিয়েছি।
গ্যাজেট নোটিফিকেশন করে কেন্দ্র সরকার জানিয়েছিল উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু চা বাগান অধিগ্রহণ করবে কিন্তু তা কিছুই হয়নি। তার পরিবর্তে দেড় হাজার কোটি টাকার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। সম্প্রতি উপনির্বাচন এবং লোকসভা নির্বাচনে তার প্রমাণ মিলেছে যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোদির মিথ্যাচারের যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। যা বলার ভরসা রেখেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর।”