সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
কলকাতা তথা বাংলার জন্য এক নতুন ইতিহাস রচিত হলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে। ‘ঢেউ’ নামক ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ফেরি চালু হলো গঙ্গার বুকে।
এটি দেশের প্রথম ও দ্রুততম বৈদ্যুতিক জলযান, যা পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নিদর্শন।
পর্যটনে নতুন দিশা:
'ঢেউ'-এর মাধ্যমে কলকাতার রিভার ট্যুরিজম বা জলপথে ভ্রমণ এবার এক নতুন রূপ নিতে চলেছে। ভারতীয় ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।
এই ২ ঘণ্টার সফর শুরু হবে মিলেনিয়াম পার্ক থেকে। এরপর পর্যায়ক্রমে পেরিয়ে যাবে হাওড়া ব্রিজ, বালি ব্রিজ, বেলুড় মঠ এবং দক্ষিণেশ্বর।
যাত্রার জন্য দুই রকমের টিকিট মূল্য নির্ধারিত হয়েছে:
এসি: ₹৩০০
নন-এসি: ₹২০০
‘ঢেউ’-এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য:
এই জলযান তৈরি করেছে ভারতীয় জাহাজ নির্মাতা সংস্থা Garden Reach Shipbuilders and Engineers (GRSE)।
এটি একটি টু-হালড ক্যাটামারান ফেরি, যার দৈর্ঘ্য ২৪ মিটার এবং এতে একসঙ্গে ১৫০ জন যাত্রী উঠতে পারেন।
ব্যাটারি ক্ষমতা: ২৪৬ কিলোওয়াট লিকুইড-কুলড ব্যাটারি সিস্টেম
সোলার প্যানেল শক্তি: প্রতি ঘন্টায় ১৮ কিলোওয়াট
প্রপালশন মোটর: ৫০ কিলোওয়াটের দুইটি ইলেকট্রিক মোটর
গতি: সর্বোচ্চ ১০ নট (প্রায় ১৮.৫ কিমি/ঘণ্টা)
সার্টিফিকেশন: Indian Register of Shipping (IRS)-এর মানদণ্ডে তৈরি
এই ফেরিটি এমনভাবে তৈরি যাতে এটি উভয় প্রকার চার্জিং সিস্টেম সাপোর্ট করে— শোর-বেসড চার্জার এবং অনবোর্ড সোলার প্যানেল।
'ঢেউ' কেন আলাদা?
এটি শুধু একটি ফেরি নয়, বরং একটি ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব যানবাহনের পথপ্রদর্শক। টেকসই জলযান, ইকো-ট্যুরিজম এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস— এই তিনটি বিষয়কে একসঙ্গে মাথায় রেখে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই উদ্যোগের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করল— বাংলাও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে।
পরিবেশবান্ধব জলপথ: ভারতের দৃষ্টান্ত
ভারতে প্রথমবারের মতো এই ধরনের সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক ফেরি পরিষেবা চালু হলো কলকাতায়, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যেও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
নদীপথে পরিবহন শুধুমাত্র দূষণ কমায় না, বরং শহরের যানজটও হ্রাস করে।

‘ঢেউ’ শুধুমাত্র একটি ফেরি নয়, এটি কলকাতার গর্ব, বাংলার প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক, এবং ভারতের পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। নদীপথে যাতায়াতের এই অভিনব উদ্যোগে কলকাতার গঙ্গা এবার নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পেল।