সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আগামীকাল ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। আর সাগরে মকরসংক্রান্তির মেলা উপলক্ষ্যে একগুচ্ছ জনপরিষেবামূলক ও উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করলেন মমতা। মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য একাধিক নির্দেশও দিলেন তিনি। একইসঙ্গে সাগরের মেলা নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনারও অভিযোগ আনলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এবছর গ্রিন গঙ্গাসাগর মেলা করাই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য বলে জানান মমতা। এবারের মেলা সম্পূর্ণ প্লাস্টিক বর্জিত বলে জানান তিনি। আর এরপরেই কেন্দ্রকে নিশানা করেন তিনি। পুণ্যার্থীদের পুজো দেওয়ার পদ্ধতিও পরিবেশবান্ধব হবে বলে জানান মমতা। বলেন, এতে কেন্দ্রের কোনও অবদানই নেই। সাগরে মেলার জন্য কেন্দ্র এক পয়সাও দেয় না বলে ফের অভিযোগ করেন তিনি। আশ্রমের টাকা অযোধ্যায় চলে যায় বলে দাবি করেন মমতা। বলেন, “কপিলমুনির আশ্রম তিনবার ডুবে গেছে, তিনবার বানানো হয়েছে, আমরা সবটাই করে দিয়েছি। আশ্রমের চারপাশটা যাতে সামান্য টাকা দিয়ে কংক্রিট করা হয়, তার অনুরোধ করছি।”
কেন্দ্রকে নিশানা করে মমতার আরও বক্তব্য, “কুম্ভ মেলার গোটা টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দেয়। অথচ বাংলা সবসময় বঞ্চিত। সাগরের মেলাও একদিন জাতীয় মেলা হবে আশা রাখি।” এনিয়ে অনেকবার চিঠি লিখেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ মমতার।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য সুন্দরবন পুলিশ জেলা, গঙ্গাসাগর কোস্টাল থানা এবং কাকদ্বীপে আরও একটি কোস্টাল থানা থাকবে। ৩টি স্থায়ী হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে। সুলভ মূল্যে কলকাতা-গঙ্গাসাগর হেলিকপ্টার পরিষেবাও মিলবে। কেউ অসুস্থ হলে কপ্টার অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও দেওয়া হবে। মুড়িগঙ্গায় ড্রেজিং করে বাড়ানো হয়েছে গঙ্গার গভীরতা। ফলে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত লঞ্চ পরিষেবা পাওয়া যাবে। মেলায় পুণ্যার্থীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য ২২৫০টি সরকারি বাস, ২৫০টি বেসরকারি বাস, ৯টা বার্জ, ৩২টি ভেসেল, ১০০টি লঞ্চ, ২১টি জেটি ব্যবহার করা যাবে। বার্জ, লঞ্চ, জেটিতে জিপিএস ট্র্যাকিং এবং স্যাটেলাইট ট্রেকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কোনও ঘটনার মোকাবিলায় ২৫০০ সিভিল ডিফেন্স ও অন্যান্য ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে।
চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আশেপাশের হাসপাতাল মিলিয়ে ৫১৫টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাগরে আই সি ইউ-র ব্যবস্থাও থাকবে। জায়গায় জায়গায় প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকছে। চিকিৎসক সহ নার্স থাকছে। ১০০টি অ্যাম্বুলেন্স থাকছে। পর্যাপ্ত পুলিশ থাকছে। আমার ৫-৬ জন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিও থাকবে এখানে। ডিএম-এসপি-রা গাইড করবেন। দশ জন মন্ত্রীকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অফিসারও কো-অর্ডিনেশনে থাকবেন। বিভিন্ন ভাষায় পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম থাকবে। এবছর গ্রিন গঙ্গাসাগর মেলার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য প্লাস্টিকবর্জিত গঙ্গাসাগর মেলা। এটা অভিনব, কেন্দ্র এতে কোনও সাহায্য করেনি।”
মমতা এদিন বলেন, ”অনেকে ছোট একটা খবর তৈরি করে দিয়ে উস্কানি দিতে পারে। যদি আপনারা দেখেন কোথাও কোনও সমস্যা আছে তাহলে প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসুন। বিষয়টি নজরে আসলেই তার সমাধান হতে পারে।” মমতা সকলকে কার্যত অনুরোধ করে বলেন, অযৌক্তিকভাবে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে যাতে কোনও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হয়। তাঁর স্পষ্ট কথা, ”গঙ্গাসাগর মেলা সারা বিশ্বের কাছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এই মেলায় যাতে কোনওরকম নেগেটিভ ন্যারেটিভ না হয় এটা সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।”
সোমবার গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন জাতীয় মেলা ঘোষণা করা হচ্ছে না, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারও সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন তিনি। একই সঙ্গে এও বলেন, গঙ্গাসাগরকে প্লাস্টিকবর্জিত মেলা করাই তাঁদের লক্ষ্য। এটা একটা অভিনব উদ্যোগ। কিন্তু এর জন্যও কেন্দ্র কোনও সাহায্য করেনি। কুম্ভমেলায় কেন্দ্রীয় সরকার হাজার-হাজার কোটি টাকা দিলেও গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে তাঁদের কোনও উদ্যোগ দেখা যায় না বলেই দাবি মমতার।
মঙ্গলবার গঙ্গাসাগর থেকে ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাগরব্লকে মোট ১৭টি অঙ্গনওয়াড়ি থেকে একাধিক রাস্তার উদ্বোধন হয়েছে। পাশাপাশি উদ্বোধন হয়েছে গোসাবা, নামখানা, পাথরপ্রতিমা ব্লকে ১২টি জেটি, চালতাদুনিয়া, পাখিরালয়ের মধ্যে ৪টি ভেসেল চালু করা হয়েছে। এছাড়াও একাধিক জেটি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গড়ে তোলার কাজ হয়েছে।
মুড়িগঙ্গার সেতু তৈরির জন্য ডিপিআর করা হয়েছে তা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন ফের জানান, সেতুর কাজ শেষ করতে চার বছর সময় লাগবে এবং সরকারিভাবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে। মমতার কথায়, এই সেতু ৫ কিমি লম্বা এবং চার লেনের। এই সেতুর নামই হবে গঙ্গাসাগর সেতু।